চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন নিপীড়ন, ২ শিক্ষার্থী আজীবন বহিষ্কার
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীকে যৌন নিপীড়নের ঘটনায় অভিযুক্ত ২ শিক্ষার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার (২৩ জুলাই) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব হেলথ, রেসিডেন্স অ্যান্ড ডিসিপ্লিনারি কমিটির মতে, অপরাধীরা ক্ষমার অযোগ্য কাজ করেছে। এ ঘটনায় জড়িত ২ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া হাটহাজারী কলেজের বাকি ২ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিত আবেদন করা হবে। বাকি পলাতকদের কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হলে তাদেরও বহিষ্কার করার সুপারিশ করা হয়েছে।
আটক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলেন, ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের আজিম হোসাইন, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের নুর হোসেন শাওন ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের নুরুল আবছার বাবু। বহিরাগতরা হলেন মো. সাইফুল, হাটহাজারী কলেজের অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাসুদ রানা ও মো. সাইফুল। তাদের মধ্যে দুই সাইফুল ছাড়া বাকিরা গ্রেফতার হয়েছে।
এর আগে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে মূল হোতাসহ ৪ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব-৭। র্যাব-৭-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এম এ ইউসুফ জানান, ঘটনার হোতা আজিম হোসাইন নিজের মোবাইল দিয়ে ভিডিও ধারণের কথা স্বীকার করেছে। এই ঘটনাটির সঙ্গে ৬ জনের সম্পৃক্ততার কথা তারা নিজেরাই স্বীকার করেছে। এর মধ্যে তিনজন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং তিনজন স্থানীয় বহিরাগত।
র্যাব কর্মকর্তা এম এ ইউসুফ বলেন, শুক্রবার ঘটনার মূল অভিযুক্ত আজিমকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশেই তার বাড়ি। তার নেতৃত্বে পুরো ঘটনা ঘটেছে। তাকে গ্রেপ্তারের পর আমরা বাকিদের নাম পাই। আজিম এর আগেও ছাত্রীদের ইভটিজিং করেছে বলে আমাদের কাছে স্বীকার করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বাড়ি হওয়ার সুবাদে নিজেকে অনেক ক্ষমতাধর মনে করত সে।’
গত ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী যৌন নির্যাতনের শিকার হন। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারায় এ মামলায় অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে। এই ঘটনায় নানা আলোচনার মধ্যে গত ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসিক হলে রাত ১০টার মধ্যে হলে প্রবেশের সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এদিকে বুধবার মধ্যরাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন হলের ছাত্রীরা। রাত ৯টা থেকে প্রথমে বিভিন্ন হলের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। রাত ১০টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে গিয়ে রাত ১টা পর্যন্ত দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
সেদিন যা ঘটেছিল
র্যাব-৭-এর অধিনায়ক জানান, অভিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে আমরা জানতে পেরেছি, সেদিন রাত ১০টা-সাড়ে ১০টার দিকে ওই ছাত্রী তার এক বন্ধুসহ হলের দিকে ফিরছিলেন। আজিম ও তার গ্রুপটি মোটরসাইকেল নিয়ে রাতে ঘোরাঘুরি ও আড্ডা দিতে থাকে। ঘোরাঘুরির সময় হঠাৎ তাদের নজরে আসে, একটি ছেলে ও একটি মেয়ে বোটানিক্যাল গার্ডেনের দিক থেকে হেঁটে আসছে, জায়গাটি একটু নির্জন। শুরুতে তারা গিয়ে ভুক্তভোগীদের চার্জ করে। ছাত্রীর সঙ্গে থাকা ছেলেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন না। অভিযুক্তরা তাদের কাছে গিয়ে এত রাতে বাইরে থাকার কারণ জিজ্ঞেস করে। ছেলেটির কাছে দাবি করা হয় চাঁদা। একপর্যায়ে তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়া হয়।
র্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, এরপরই তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। পরে ছয়জন তাদের ওপর চড়াও হয়। ছেলেটিকে আটকে রেখে মেয়েটিকে তারা নির্যাতন করে। প্রথমে চড়-থাপ্পড় মারে, তারপর বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের চেষ্টা করে। ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, ভ্যানিটি ব্যাগ ও টাকা পয়সা নিয়ে নেওয়ার পর তারা (জড়িতরা) ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। তখন ভুক্তভোগীরা একটি হলে গিয়ে এক ছাত্রের মোবাইল থেকে ফোন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অভিযোগ জানায়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল জানান, এরা বগিভিত্তিক সংগঠন সিএফসির সদস্য। এর দায় ছাত্রলীগ নেবে না। বিশ্ববিদ্যালয় আইনি ব্যবস্থা নেবে। ঘটনার পরপরই আমরা চেষ্টা করেছি অভিযুক্তদের খুঁজে বের করে র্যাবের হাতে ধরিয়ে দিতে। কোন ব্যক্তির অপরাধের দায় তো সংগঠন নেবে না। এখন আসলে কিছু হলেই সবাই ছাত্রলীগকে অভিযুক্ত করার জন্য উঠে পড়ে লেগে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্তে যা এসেছে
ছাত্রীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি রিপোর্টও দিয়েছে। সেখানে তারা দুই জনের নাম পাওয়ার কথা জানিয়েছিল। তাদের একজন মূল অভিযুক্ত মোহাম্মদ আজিম হোসাইন ও ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র মেহেদী হাসান হৃদয় (বান্টি)।
প্রক্টর রবিউল হাসান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, র্যাবের সংবাদ সম্মেলনে হৃদয়ের সম্পৃক্ততার তথ্য আসেনি। র্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, ভুল করে হয়তো হৃদয়ের নাম তদন্ত কমিটি বলে থাকতে পারে।