Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
December 22, 2024
হেডলাইন
Homeআন্তর্জাতিক‘ডিপফেক’ এর ৯৯% শিকারই নারী, বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

‘ডিপফেক’ এর ৯৯% শিকারই নারী, বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

‘ডিপফেক’ এর ৯৯% শিকারই নারী, বেরিয়ে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য

‘ডিপফেক’ পর্ন হচ্ছে এমন এক ধরনের পর্নোগ্রাফিক ভিডিও যাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন নারীর দেহের সাথে আরেকজন নারীর মুখ যোগ করে দেয়া হয়। এর শিকার হয়েছেন যে নারীরা তাদের নিয়ে ‘মাই ব্লন্ড জিএফ’ নামে একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন রোজি মরিস। ছবিটিতে এই নারীরা বর্ণনা করেছেন, এই ডিপফেক পর্ন কীভাবে তাদের জীবনকে বিপর্যস্ত করে দিয়েছে।

হেলেন মর্ট একজন লেখিকা। রোজি মরিসের তৈরি প্রামাণ্যচিত্র “মাই ব্লন্ড জিএফ” ছবিতে তিনি একজন মূল চরিত্র। একদিন তিনি ঘটনাচক্রে আবিষ্কার করেন যে একটি পর্ন ওয়েবসাইটে তার ‘ডিপফেক’ ছবি বের হয়েছে। ডিপফেক বা ভুয়া পর্ন হচ্ছে এমন এক ধরনের পর্নোগ্রফিক ছবি বা ভিডিও – যাতে ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে একজন নারীর দেহের সাথে আরেকজন নারীর মুখ যোগ করে দেয়া হয়।

হেলেনের ধারণা, তার একটি পুরোনো ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে তার ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এ ছাড়া আরো ব্যবহৃত হয়েছে পাবলিক ডোমেইনে থাকা তার বেশ কিছু ছবি – যা পেশাদারদের তোলা।
তার বয়স যখন ১৯ থেকে ৩২ – সেই সময়কালের অনেকগুলো ছবি এই ডকুমেন্টারিতে দেখাচ্ছিলেন তিনি। এতে দেখা যায়, বিয়ে এবং অন্যান্য পারিবারিক অনুষ্ঠানে তার হাসিমুখের ছবি। আর কিছু ছবি আছে যা তিনি গর্ভবতী থাকার সময় তোলা।

এগুলোই হচ্ছে সেই ছবি যেগুলো ডিজিটাল সম্পাদনার মাধ্যমে জুড়ে দেয়া হয়েছে অন্য কিছু নারীর ছবির সাথে। সেই ছবিগুলো অত্যন্ত খোলামেলা এবং সহিংস যৌন ছবি।

‘আমার সোনালি চুলের প্রেমিকা’
“আমার নিজের চোখে এ ছবিগুলো দেখা দরকার ছিল” – প্রামাণ্যচিত্রে সোজা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলছেন হেলেন। দর্শকদের জন্য এটি একটি অস্বস্তিকর কথোপকথনের দৃশ্য। “ছবিতে দেখা যায় একজন নারী, তিনি বিছানার কিনারায় বসে আছেন। তার মুখমন্ডলটি আমার, কিন্তু মুখ আমার নয়। তিনি একটি যৌন কাজ করছেন….।”

তিনি বলছেন, মহিলাটির মুখের সাথে বাকি দেহের রঙের গরমিল থেকে বোঝা যায় যে এটাতে একজনের দেহে আরেকজনের মুখ জুড়ে দেয়া হয়েছে। “এই মহিলাটির গায়ের চামড়ার রং আমার চেয়ে অনেক বেশি রোদে পোড়া, তবে আমার গায়ে যে উল্কি তার গায়ের উল্কিও হুবহু এক।”

“মহিলাটি কিছু একটা টেক্সটের দিকে তাকাচ্ছেন, – এটা হচ্ছে ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তাকে অপমান করার আমন্ত্রণ, এবং সেই ব্যক্তিটি হচ্ছি আমি। ” ওই টেক্সট বার্তায় হেলেনকে বর্ণনা করা হচ্ছে “মাই ব্লনড্ জিএফ” – যার অর্থ “আমার সোনালি চুলের প্রেমিকা।” রোজি মরিস এ কথাটি থেকেই তার প্রামাণ্যচিত্রের নাম দিয়েছেন।

দুঃস্বপ্ন ও সন্দেহবাতিক
রোজি মরিস তার ছবিতে এটা তুলে ধরতে চেয়েছেন যে এই ডিপফেক ছবিগুলো হেলেনের মনে কত গুরুতর প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে – যার মধ্যে আছে দুঃস্বপ্ন ও সন্দেহবাতিকগ্রস্ত হয়ে পড়া। হেলেন বলছেন, তার প্রায়ই মনে হয় যে রাস্তার লোকজন বোধহয় তার এই গোপন ঘটনার কথা জেনে গেছে।

“মনে হয়, রাস্তার লোকজন বুঝি ওই ছবিগুলোর কথা জেনে গেছে, তারা আমার এই ভয়াবহ গোপন ঘটনাটি জেনে গেছে। হঠাৎ করেই ওই ঘটনাটি আমার জীবনের এক ভয়াবহ গোপন ঘটনা বলে মনে হতো লাগলো।”

ডিপফেক ছবিটি যে বানিয়েছে সে অনুপস্থিত
তবে এ নিয়ে হেলেন যে এই প্রথম কথা বললেন – তা নয়। তা ছাড়া ডিপ ফেক পর্ন নিয়ে এর মধ্যে আরো কিছু প্রামাণ্যচিত্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু মরিসের ছবিটি কী কারণে আলাদা?

“আমার ছবিটিতে – এর জন্য দায়ী ব্যক্তিটির ব্যাপারে কোন মনোযোগ দেয়া হয়নি। যে লোকটি এ কাজ করেছে, তার মাথায় কী কাজ করেছিল সেদিকে আমার কোন আগ্রহই ছিল না” – বলছেন পরিচালক রোজি মরিস।

“আমার প্রধান লক্ষ্য ছিল – আমি চেয়েছিলাম যেন আপনি এ গল্পের প্রতিটি পর্বে হেলেনের পাশে থাকেন।”

তিনি বলছেন, হেলেনের সাথে দেখা হবার পরই তিনি উপলব্ধি করেন যে একজনের সাথে কোন বাস্তব যোগাযোগ না থাকলেও তার ওপর যৌন নিগ্রহ চালানো সম্ভব।

“এটাই আমাকে এ ছবি করতে উজ্জীবিত করেছে এবং এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি হতবাক করেছে।”

ভিক্টিমের জীবনের সবক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ে
ডিপফেক ছবির শিকার হওয়া কারো যে ‘ট্রমা’ বা মানসিক আঘাতের অভিজ্ঞতা হয় তা খুবই বাস্তব। ইমেজ-ভিত্তিক যৌন অত্যাচারের বিষয়ে একজন বিশেষজ্ঞ ডারাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লেয়ার ম্যাকগ্লিন। তিনি বিবিসিকে বলছেন, এর প্রভাব জীবনকে বিপর্যস্ত এবং ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেয়।

“অনেক ভিক্টিমের একারণে সামাজিক বিভাজন ঘটে যায়। তাদের জীবন ওই ঘটনার ‘আগে’ ও ‘পরে’ – এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে – পেশাগত, ব্যক্তিগত, অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্যগত বা সার্বিকভাবে ভালো থাকা-না-থাকা – সবকিছুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।”

ছবিতে হেলেন বলেন, “আমার মনে হতো যেন ওই ছবিগুলো আসল , যারা তাদের নিজের ছবিকে ওই ধরনের পরিবর্তন করা অবস্থায় দেখেনি – তাদেরকে এটা বোঝানো খুব কঠিন।”

“তারা সরাসরি আমাকে কিছু করেনি, কিন্তু এইসব ছবিগুলোকে আমার মাথায় গেঁথে দিয়েছে। আমি ওগুলোকে আর আমার ‘না-দেখা’ বানাতে পারছি না।”

“এমনকি যে ছবিতে কোন পরিবর্তন করা হয়নি – সেটার দিকেও আমি আর আগের মত করে তাকাতে পারছিনা।”

মরিস বলছেন, হেলেন ওই ছবিগুলো দিয়ে যেন “সংক্রমিত” হয়ে গেছেন।

“একটা ছবিকে সেই ছবি তোলার মুহূর্তটির স্মৃতি থেকে আলাদা করা যায় না। সবচেয়ে গুরুতর ব্যাপার হলো, হেলেনের ক্ষেত্রে সেই স্মৃতিগুলো বদলে দেয়া হয়েছে। ছবিগুলোতে কতগুলো মিথ্যে স্মৃতি বসিয়ে দিয়ে সেই মিথ্যেগুলোকে তার মনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এর ফলে তার যে মানসিক আঘাত – তা আসলেই পরিমাপ করা যায় না।”

“এটা হচ্ছে মানসিকভাবে আক্রমণের শিকার হবার মতো একটা অভিজ্ঞতা।”

ডিপফেকের ৯৯% শিকারই নারী
কেন্ট ল’ স্কুলের অধ্যাপক এরিকা র‍্যাকলি বিবিসিকে বলছেন, কয়েক বছর আগে তিনি এবং তার কিছু সহকর্মী এরকম “ইমেজ-ভিত্তিক যৌন অত্যাচারের” শিকার হওয়া কয়েকজনের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন।

“একজন মন্তব্য করেছিল যে মিথ্যে হলেও এটা তারই ছবি এবং সে কারণেই এটা নিগ্রহ” – বলেন তিনি।

ডিপফেকের ওপর নজরদারি করে এমন একটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে সেন্সিটি এআই। তারা বলছেন, তাদের গবেষণায় দেখা যায় ৯৬% ডিপফেক যৌন ছবিই সম্মতির ভিত্তিতে নেয়া হয়নি, এবং এর শিকারদের ৯৯%ই নারী।

অধ্যাপক ম্যাকগ্লিন বলছেন, মেয়েদের এই নিগ্রহের শিকার হবার সম্ভাবনাই বেশি , এবং এগুলো করে থাকে প্রধানত পুরুষরাই ।

“নারীর বিরুদ্ধে ঘটা অপরাধকে গুরুত্বের সাথে নেবার রেকর্ড সমাজের নেই, এবং অনলাইন অপরাধকে প্রায়ই তুচ্ছ বা সাধারণ ব্যাপার বলে মনে করা হয়।”

কে এটা করেছে তা না জানার যন্ত্রণা
হেলেন আরো বলছিলেন, এই ছবিগুলো কে তৈরি করেছে তা জানতে না পারার অকল্পনীয় দুশ্চিন্তার কথা।

“ওই ছবিগুলোর প্রতিটিতেই আমার চোখ সোজা ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে আছে। কিন্তু যে এই ছবিগুলো তৈরি করেছে তার কোন মুখ নেই।”

পুলিশ যে এ ব্যাপারে কিছু করতে অক্ষম সেটা জেনে তিনি আরো বেশি আতংকিত হয়েছিলেন।

পুলিশ তাকে বলেছিল, তারা কিছু করতে পারবে না কারণ এখানে কোন অপরাধ সংঘটিত হয়নি। ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের আইনে ডিপফেক ছবি তৈরি করাটা বেআইনি নয়, তবে স্কটল্যান্ডের আইনে পুলিশ এর তদন্ত করতে পারে।

তবে ব্রিটেনে একটি অনলাইন নিরাপত্তা আইনের খসড়া এখন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে – যাতে সম্মতিসূচক নয় এমন ডিপফেক ছবিক তৈরি করাকে বেআইনি করা হবে।

রোজি মরিস বলছেন, এ ছবিটি দিয়ে তিনি কিছু প্রশ্ন তুলতে চেয়েছেন এবং তিনি মনে করেন এ বিষয়টির দিকে মনোযোগ দেয়া উচিত।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment