ধর্ষক এবং গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রই পাষণ্ড: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিমালিকানার পথ পরিত্যাগ করে সামাজিক উন্নতির দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। সবার উন্নতির মধ্যে ব্যক্তিগত উন্নতি নিহিত- দরকার এই বোধ।
রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণিজ্য অনুষদে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ‘অ্যাকাউন্টিং উইক’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক রিয়াজুর রহমান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম ও ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। স্বাগত বক্তব্য দেন এ বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ ও অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি স্বদেশ রঞ্জন সাহা।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকায় এসে বলেছিলেন- উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। দু দিন পরে কার্জন হলে সমাবর্তনে এসে তিনি একই কথা বলেছিলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনের কথা, জিন্নাহকে কীভাবে ধিক্কার দেওয়া হয়েছে, তা আমরা জানি। ওই সমাবর্তনে তিনি আরেকটা কথা বলেছিলেন, যেটা আমরা জানি না। তিনি শিক্ষার্থীদের বলেছিলেন, ‘তোমরা রাজনীতি করো না। বরং তোমাদের সামনে উন্নতির যে স্বর্ণদুয়ার উন্মোচিত হয়েছে, সেটা গ্রহণ কর।’ এই যে কথাটা জিন্নাহ বলেছিলেন, তার কিন্তু কোনও প্রতিবাদ হয় নি। উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রতিবাদ হয়েছে; ছাত্ররা ‘নো নো’ বলেছে। কিন্তু কেউ জিন্নাহ সাহেবকে বলেন নি- এই যে একজনের উন্নতির কথা বলছেন, এই উন্নতি তো বহু মানুষকে বঞ্চিত করার উন্নতি। এর সঙ্গে তো বহু মানুষের ক্রন্দন থাকবে, নির্যাতন থাকবে। এরপরে আমাদের ইতিহাস উন্নতির ইতিহাস। কিন্তু এই উন্নতি হচ্ছে ব্যক্তিগত উন্নতি। এই উন্নতি সামাজিক উন্নতি আনে নি।
তিনি বলেন, বর্তমানে ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। ধর্ষক এবং গোটা সমাজ ও রাষ্ট্রই পাষণ্ড। এসব অমানবিকতা দূর করতে হবে। সামাজিকতা ও জবাবদিহির কথা ভাবতে হবে। অন্যথায় আমরা ক্রমাগত অন্ধকারের দিকে আগাব। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসে করে বান্ধবীর বাসায় যাওয়ার পথে একজন ছাত্রীকে এক মাদকাসক্ত ও ভবঘুরে সিরিয়াল রেপিস্ট ধর্ষণ করল। এই ধর্ষণ আমাদের উন্নতির নিচে যে ক্রন্দন আছে, তারই প্রতিচ্ছবি। এটি বদলাতে হবে।
সপ্তাহব্যাপী এ আয়োজনে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ, কবিতা আবৃত্তি, খেলাধুলা, নাচ-গান, বিজনেস প্ল্যান কম্পিটিশন, র্যাফেল ড্রসহ থাকবে নানা আয়োজন। উদ্বোধন শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হয়। পরে বাণিজ্য অনুষদের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা।