পশ্চিমবঙ্গে ১১ দিনের বিচার বিভাগীয় রিমান্ডে পি কে হালদার
বাংলাদেশ থেকে ১০ হাজার কোটি রুপি আত্মসাৎ এর অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদার সহ ছয় অভিযুক্তকে ১১ দিনের বিচার বিভাগীয় রিমান্ডের নির্দেশ দিল কলকাতার নগর দায়রা আদালত। ১০ দিনের রিমান্ড শেষে শুক্রবার (২৭ মে) আদালতের চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট এর এজলাসে তোলা হয় তাদের। এসময় ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী আদালতের কাছে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের আবেদন জানায়, উল্টোদিকে অভিযুক্তদের আইনজীবী সোমনাথ ঘোষ ও আলী হায়দার চার দিনের জেল হেফাজতের আবেদন জানায়। দুই পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে ১১ দিনের বিচারবিভাগীয় হেফাজতের নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত বিচারক সৌভিক ঘোষ। সেক্ষেত্রে আগামী ৭ জুন ফের অভিযুক্ত সকলকে আদালতে তোলা হবে।
তবে তদন্তের স্বার্থে কারাগারে গিয়েই ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবেন, সেইসাথে জিজ্ঞাসাবাদের ওই বয়ানও রেকর্ড করা হবে।
এদিন দুপুর ১টা ২০ মিনিট নাগাদ ইডির আঞ্চলিক কার্যালয় সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরিয়ে কলকাতা নগর দায়রা আদালতের দিকে রওনা হয় পিকে হালদারের ভাই ও তার চার সহযোগী- প্রাণেশ কুমার হালদার, স্বপন মিস্ত্রি ওরফে স্বপন মৈত্র, উত্তম মিস্ত্রি ওরফে উত্তম মৈত্র এবং ইমাম হোসেন ওরফে ইমন হালদারকে। তবে আদালতে যাওয়ার পথে কোন প্রশ্নের উত্তর দেননি কেউই।
যদিও সাংবাদিকদের নজর এড়িয়েই এদিন সিজিও কমপ্লেক্স থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয় মুল অভিযুক্ত পিকে হালদারকে। অন্যদিকে আলিপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেল থেকে আদালতে নিয়ে আসা হয় নারী অভিযুক্ত শর্মী হালদারকে।
এদিন পি কে হালদার সহ পাঁচ পুরুষ অভিযুক্তকে এজলাসের একদিকে রাখা হয়। সেখানে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা সারতে দেখা যায় তাদের।
অন্যদিকে নারী অভিযুক্ত শর্মীকে রাখা হয় আরেকটি প্রান্তে। শুনানি শেষে শর্মীকে যখন কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পৃথকভাবে আদালত থেকে বাইরে বের করা হয় তখন সাংবাদিকরা শত চেষ্টা সত্ত্বেও তার মুখ থেকে একটি কথা বের করতে পারেনি।
অন্যদিকে একদিন বিকেল পাঁচটা দশ নাগাদ যখন আদালত থেকে পিকে হালদারসহ পাঁচ অভিযুক্তকে কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল-এর উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয় তখনও তাদের কেউই একটি প্রশ্নেরও উত্তর দেননি।
গত ১৪ মে অশোকনগরসহ পশ্চিমবঙ্গের জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ইডি। এরপর প্রথম দফায় ৩ দিন এবং দ্বিতীয় দফায় ১০ দিনের ইডি রিমান্ডের নির্দেশ দেয় আদালত।
গত কয়েক দিন ধরে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তারা।
জানা গেছে, শুধু অশোকনগর বা পশ্চিমবঙ্গ নয়, পি কে হালদার এবং তার সহযোগীরা গোটা ভারত জুড়ে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিল। তাদেরকে জেরা করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তিরও হদিস পাওয়া গেছে। যদিও সেই আয়ের উৎস পি কে হালদার বা তার সহযোগিরা- কেউই দেখাতে পারেনি। কলকাতা এবং তার উপকণ্ঠে এমন ১৩টি সংস্থার খোঁজ মিলেছে যেগুলো পি কে হালদার বা তার সহযোগীদের হাতে গড়া।
এদিন এসব প্রশ্নের উত্তরে ইডির আইনজীবী অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, পি.কে হালদারকে ১৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমন কিছু তথ্য প্রমাণ হাতে এসেছে যাতে প্রমাণিত হয়েছে যে, পি কে হালদার এবং তার সহযোগীরা গোটা ভারত জুড়ে প্রতারণার জাল ছড়িয়েছিল। তাদেরকে জেরা করে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে। কিন্তু সেই আয়ের উৎস পি. কে হালদার বা তার সহযোগিরা দেখাতে পারেনি।
অরিজিৎ চক্রবর্তী জানান, পি কে হালদারকে জেরা করে প্রায় ১৩টি বাড়ি, ফ্ল্যাট, বোট হাউস এবং অসংখ্য জমির হদিস পাওয়া গেছে সেগুলি কোনটা পি কে হালদার ও সহযোগীদের নামে কোনটা আবার বেনামে। বাংলাদেশ থেকে আসা অর্থ মূলত রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করা হয়েছে। কলকাতা এবং তার উপকণ্ঠে এমন ১৩ টি সংস্থার খোঁজ মিলেছে যেগুলি হালদার বা তার সহযোগীদের হাতে গড়া।
বাংলাদেশ থেকে আত্মসাৎ করা টাকা বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ইডির আইনজীবী বলেন, ‘এটি দুই দেশের ব্যাপার। সমস্ত রকম আইনি জটিলতাকে সরিয়ে রেখে যেভাবে তারা এগোবে এবং বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি- সব কিছুর ওপর ভিত্তি করে তাকে হস্তান্তর করা হতে পারে। তবে এটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার।
পি.কে হালদার তদন্তে সম্পূর্ণ সহায়তা না করলেও যতটুকু করছে তা দিয়ে তদন্তের কাজ এগোচ্ছে বলেও এদিন জানান অরিজিৎ চক্রবর্তী।
এদিকে শুনানির শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী সোমনাথ ঘোষ ও আলী হায়দার দাবি করেন, এখনো পর্যন্ত যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ দাখিল করা হয়েছে তার সমস্ত ভুয়া। আসামিরা প্রত্যেকেই ভারতীয়। তারা বাংলাদেশের হলে তাদের বিরুদ্ধে কেন পৃথক ধারায় মামলা করা হচ্ছে না। তাদের মক্কেলকে এদিন তারা প্রশান্ত কুমার হালদার হিসাবে চিনতেও অস্বীকার করেন। তারা বলেন, তাদের মক্কেলের নাম শিব শংকর হালদার ।