বাইডেনের পরিবর্তে ডেমোক্রেটের বিকল্প ৯ প্রার্থী যারা
আগামী ৫ নভেম্বরের নির্বাচন উপলক্ষে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে নির্বাচনী বিতর্কে মুখোমুখি হওয়ার পর তার সক্ষমতা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে ডেমোক্রেট শিবিরে। এ অবস্থায় তারা বাইডেনের ওপর ভরসা অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে। অনেকে জো বাইডেনকে বাদ দিয়ে নতুন করে প্রার্থী দেওয়ার দাবি তুলেছেন। এমনকি বিতর্ক শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই উপস্থাপকরা প্রকাশ্যে বাইডেনের জায়গায় অন্য প্রার্থীর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন। ফলে সংকটকালীন বিকল্প হিসেবে, তারা এমন প্রার্থী চাইছেন, ভোটারদের কাছে যার গ্রহণযোগ্যতা থাকবে।
ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটির নিয়ম অনুযায়ী, দলের অন্য নেতারা বাইডেনকে প্রার্থীতা থেকে বাদ দিতে পারে এমন কোনো নিয়ম নেই। তারা কাউকে বাইডেনের স্থলাভিষিক্ত করতে হলে তা কনভেনশন ফ্লোরে মনোনয়ন প্রক্রিয়া উন্মুক্ত করার মাধ্যমে করতে হবে। এ প্রক্রিয়াটি হলো: প্রথমে বাইডেনকে নিজে তার প্রার্থীতা প্রত্যাহার করতে হবে। এরপর তার জায়গায় অন্য কাউকে বাছাইয়ে একটি উন্মুক্ত প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। এবারের ‘প্রাইমারি’তে প্রায় চার হাজার ডেলিগেটের মধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন বাইডেন। তবে সেসময় যারা বাইডেনকে সমর্থন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তাদেরও অনেকে এই বিতর্কের পর নড়েচড়ে বসেছেন।
তবে তারা যদি বাইডেনকে মনোনয়ন প্রত্যাহারে চাপ দিতে চায়, তাহলে কমপক্ষে তাদের অর্ধেককে নিজেদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে হবে এবং বাইডেনকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। ডেমোক্রেটরা চাইলে এই আগস্টে শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে নতুন প্রার্থী বেছে নিতে পারে। তবে বাইডেনের সরে যাওয়ার সম্ভাবনা কম।
কিন্তু বাইডেন যদি সত্যিই নিজের নাম প্রত্যাহার করে নেন, তাহলে তার স্থলাভিষিক্ত কে হবেন তা নিয়েই আলোচনা শুরু হয়েছে। বাইডেনের উত্তরসূরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে এমন কয়েকজন ডেমোক্রেট প্রার্থীর কথা জানিয়েছে রয়টার্স ও নিউ ইয়র্ক টাইমস। তারা হলেন-
ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস
বাইডেন যদি সরে দাঁড়ান তাহলে তার পরিবর্তে এই তালিকায় প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ভারতীয়-আমেরিকান নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট, কমলা হ্যারিস এক নম্বরে থাকবেন তা নিশ্চিত বলা যায়। ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ভোটাধিকার ও পররাষ্ট্রনীতির মতো ইস্যুতে বাইডেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। তিনি সান ফ্রান্সিসকো জেলা অ্যাটর্নি, ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল এবং ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে সান ফ্রান্সিসকোর সাবেক মেয়র ও বর্তমান দেশটির সবচেয়ে জনবহুল অঙ্গরাজ্য ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের নামও জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে। তিনি বাইডেনের অন্যতম প্রধান সমর্থক। তবে বিতর্কের পর নিউসম বাইডেনের পুনর্নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে দাঁড়ানোর পরামর্শ নাকচ করে দিয়ে এ ধরনের কথাবার্তাকে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে অভিহিত করেন।
মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার
রাজনৈতিক লড়াইয়ে বেশ অভিজ্ঞ মিশিগানের গভর্নর গ্রেচেন হুইটমার। হুইটমার তার ২০২২ সালের পুনর্নির্বাচনে রিপাবলিকান টিউডর ডিক্সনের বিরুদ্ধে প্রায় ১১ পয়েন্টে জিতেছিলেন। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মিশিগান গুরুত্বপূর্ণ হবে এবং হুইটমার হবেন বাইডেনের প্রধান সমর্থক। বাইডেন প্রার্থী না হলে হুইটমারের মধ্য-পশ্চিমা পটভূমি, শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক এবং মধ্যপন্থি আবেদন তাকে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলতে পারে। তবে রিপাবলিকান পার্টির পক্ষে ট্রাম্পের লড়াইয়ে তিনি হবেন নতুন মুখ।
ইলিনয়ের গভর্নর জেবি প্রিটজকার
ইলিনয়ের গভর্নমেন্ট জেবি প্রিটজকার হায়াত হোটেল ফরচুনের উত্তরাধিকারী। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন তার ফৌজদারি বিচারে দোষী সাব্যস্ত হন, তখন প্রিটজকার তাকে ব্যাপকভাবে আক্রমণ করেছিলেন। তিনি পরপর দুই মেয়াদে গভর্নর হিসাবে বিজয় অর্জন করেছেন এবং তার মেয়াদে গর্ভপাতের অধিকার এবং বন্দুক নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। এছাড়া তার আরেকটি দিক হলো বিপুল সম্পদ। তিনি প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের মালিক যা তাকে আমেরিকার সবচেয়ে ধনী নির্বাচিত কর্মকর্তা বানিয়েছে।
মিনেসোটার সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার
২০০৭ সাল থেকে সিনেটে থাকা সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নিউ হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারিতে তিনি বাইডেন ও সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনের থেকে ভালো ফলাফল করেন। তবে, তিনি দক্ষিণ ক্যারোলিনা প্রাইমারিতে পর্যাপ্ত সমর্থন অর্জন করতে না পেরে প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে পড়েন। তারপরও, যদি বাইডেন প্রার্থী না হন, তাহলে ক্লোবুচার শক্তিশালী প্রার্থী হতে পারেন। প্রাইমারির সময় তিনি তার জাতীয় প্রোফাইল বাড়িয়েছিলেন এবং মিনেসোটার সিনেটর হিসেবে তার দ্বিপক্ষীয় সাফল্যের দীর্ঘ রেকর্ড রয়েছে।
নিউ জার্সির সিনেটর কোরি বুকার
সিনেটর কোরি বুকার ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও ওই বছরের জানুয়ারিতে তার প্রচারণা শেষ করেন। প্রাক্তন নেওয়ার্ক মেয়রকে ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রতিযোগী হিসেবে দেখা হচ্ছে। বুকার দক্ষিণ ক্যারোলিনায় ২০২৮ সালের প্রচারণা শুরু করতে পারেন, যেখানে তিনি ২০১৯ এবং ২০২০ সালে প্রচারণা চালিয়েছিলেন। ডেমোক্রেটদের যদি বাইডেন ছাড়া অন্য কাউকে বেছে নিতে হয়, তাহলে বুকারের নাম বিবেচনায় থাকতে পারে।
নর্থ ক্যারোলাইনার গভর্নর রয় কুপার
নর্থ ক্যারোলাইনার বাইরে ডেমোক্রেটিক ভোটারদের মধ্যে গভর্নর রয় কুপার খুব একটা বড় নাম নন, অন্তত এখনো না। তিনি একজন সাবেক রাজ্য আইনপ্রণেতা, এক সময়ের নর্থ ক্যারোলাইনার অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বর্তমান দুই মেয়াদের গভর্নর। ১৯৯২ সালে বিল ক্লিনটনের পর থেকে ডেমোক্রেটরা দক্ষিণের কোনো গভর্নরকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেয়নি। এ বছর না হলেও ২০২৮ সালে কুপার দলের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন।
মেরিল্যান্ডের গভর্নর ওয়েস মুর
সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং রোডস স্কলার, ওয়েস মুর ২০২২ সালে মেরিল্যান্ডের গভর্নর নির্বাচিত হন। শিশু দারিদ্র্য এবং আবাসন সামর্থ্যের মতো সমস্যা মোকাবিলায় যথেষ্ট অবদান রেখেছেন তিনি। মুরকে ২০২৮ সালের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং তিনি বাইডেন এবং হ্যারিসের শক্তিশালী সমর্থক। রাজনীতিতে নতুন হলেও ডেমোক্রেটিক পার্টিতে তার প্রভাব বাড়ছে।
পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো
সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল থেকে পেনসিলভানিয়ার গভর্নর হয়েছেন জোশ শাপিরো। শাপিরো প্রায়শই তার ইহুদি বিশ্বাস সম্পর্কে কথা বলেন এবং ফিলিন্তিনপন্থী ছাত্র বিক্ষোভের বিপক্ষে কথা বলেছিলেন। তিনি সবসময় ইসরাইলের প্রতি তার সমর্থন বজায় রেখেছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কোনো ডেমোক্রেটিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে অবশ্যই জয়ী রাজ্য বলে মনে হয় তবে সেটা হবে পেনসিলভেনিয়া হবে।