বিজয়ের আনন্দে মূখর রাজধানী
রাজধানীর সংস্কৃতি অঙ্গন বিজয় দিবস উদ্যাপনে ছিল আনন্দমুখর। ভোর থেকেই লাল-সবুজের পতাকা বুকে ধারণ করে হাজারো মানুষ ছুটে গেছেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শিল্পকলা একাডেমি অভিমুখে ছিল মানুষের স্রোত। রাজধানীর মঞ্চে মঞ্চে ছিল একাত্তরের প্রেরণাসঞ্চারী সংগীত, দেশাত্মবোধক গান, নৃত্যসহ নানা আয়োজন।
বাংলা একাডেমি : বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে একাডেমির নজরুল মঞ্চে ছিল ‘বিজয় : ইতিবৃত্ত ও মর্মার্থ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. আনিসুজ্জামান বলেন, দেশের মানুষ আজ নানাভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ফলে তারা মৌলিক বিষয়ে একমত হতে পারছে না। কিন্তু শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়তে বিভাজন ভুলে মৌলিক বিষয়ে একমত হয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘দেশ উন্নত হয়েছে; এর সুফল আমরা পাচ্ছি। কিন্তু অন্যদিকে বৈষম্যও বেড়েছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় দেখলে বোঝা যায়, দেশের মানুষ আজ নানা ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কিন্তু শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়তে মানুষে মানুষে বিভাজন ভুলে মৌলিক বিষয়ে একমত হয়ে এ দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।’
প্রধান বক্তা হিসেবে বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক ও ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হলেও দেশের সর্বাত্মক বিজয় এখনও অধরা। ১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছিল, তবে ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর থেকে মুক্তির যুদ্ধ শুরু হয়েছে, যা আজও চলমান। সর্বাত্মক বিজয় পেতে আরও অনেক যুদ্ধ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। আলোচনা শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শিল্পকলা একাডেমি : বিজয় দিবস উদ্যাপনে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে শিল্পকলা একাডেমি। সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, আসাদ মান্নান, হাসান হাফিজ ও নুরুল হুদা। আবৃত্তি করেন মাহিদুল ইসলাম মাহি, আশরাফুল আলম, ইকবাল খোরশেদ, মাসকুর-এ সাত্তার কল্লোল, লায়লা আফরোজ, সৈয়দ হাসান ইমাম, রূপা চক্রবর্তী, মীর বরকত, কাজী মাহতাব সুমন, গোলাম সারোয়ার, বেলায়েত হোসেন, এসএম মহসিন, ঝর্ণা সরকার ও আহসানউল্লাহ তমাল। একক সংগীত পরিবেশন করেন আরমিনা আক্তার মিতু, মাইনুল আহসান, হৈমন্তী রক্ষিত, স্মরণ ও মফিজুর রহমান।
জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাডেমি আয়োজিত আর্ট ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটকে রং-তুলির ক্যানভাসে তুলে ধরেন তরুণ ঘোষ, কামাল পাশা চৌধুরী, জাহিদ মোস্তফা, সনজীব দাস অপু, সাইফুর রহমান, রিফাত জাহান কান্তা, মুক্তি ভৌমিক, রত্নেশ্বর সূত্রধর, আরিফুল ইসলাম ও তরিকুল ইসলাম হীরক।
স্মৃতিসৌধের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রায় ৬০ জন বাউল শিল্পী বাউল গান পরিবেশন করেন। এ ছাড়াও পরিবেশিত হয় একাডেমির অ্যাক্রোবেটিক দলের চমকপ্রদ পরিবেশনা। লিয়াকত আলী লাকীর রচনা ও নির্দেশনায় বাঙলা কলেজ যুব থিয়েটারের পরিবেশনায় নাট্যানুষ্ঠান ‘মুজিব মানে মুক্তি’ নাটক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় স্মৃতিসৌধে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন।
এরপর সন্ধ্যায় একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে ছিল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আলোচনা পর্বে বক্তৃতা করেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল।
এরপর সাংস্কৃতিক পর্বে সমবেত নৃত্য পরিবেশন করেন একাডেমির নৃত্যশিল্পীরা। একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সাজেদ আকবর, বুলবুল মহলানবীশ, মামুন জাহিদ খান, ইউসুফ, সালমা চৌধুরী প্রমুখ। আবৃত্তি করেন শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমাম ও ঝর্ণা সরকার।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট : শোভাযাত্রা, নাচ, গান, আবৃত্তি, পথনাটকসহ নানা আয়োজনে বিজয় দিবস উদ্যাপন করেছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে সকালে শুরু হয় জোটের অনুষ্ঠানমালা। শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। শোভাযাত্রাটি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনের রাস্তা প্রদক্ষিণ করে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয়।
এরপর বক্তৃতা করেন জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ। মুক্তিযুদ্ধের কবিতা পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত। শহীদ মিনারসহ একযোগে রাজধানীর পাঁচ মঞ্চে অনুষ্ঠিত জোটের প্রতিটি অনুষ্ঠান সাজানো ছিল নাচ, গান, আবৃত্তি ও পথনাটক দিয়ে।