শুরু হলো অগ্নিঝরা মার্চ
আজ ১ মার্চ। অগ্নিঝরা মার্চের প্রথম দিন। স্বাধীনতার মাস। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আটচল্লিশ বছর পেরিয়ে গেছে। কিন্তু মার্চের গল্পগুলো, স্বাধীনতার গল্পগুলো এখনও সমান আবেদন নিয়েই বাঙালিকে নাড়িয়ে দেয়। কেননা গল্পগুলো আসলে গল্প নয়। বাঙালির ইতিহাস। বাঙালির স্বাধীনতার ইতিহাস।
‘৭১ সালের মার্চ মাসেই মুক্তি ও স্বাধীনতার দাবিতে আগুন ঝরাতে নেমেছিল বাঙালি। নিজেকে স্বাধীন ঘোষণা করেছিল। এঁকেছিল একটি নতুন পতাকা। পৃথিবীর মাটিতে একটি নতুন মানচিত্র এঁকেছিল। জন্ম দিয়েছিল স্বাধীন একটি দেশ- বাংলাদেশ। ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তির যুদ্ধে। তারপর মুক্তির গান গাইতে গাইতে, যুদ্ধ করতে করতে, আপন প্রাণ বিলিয়ে দিতে দিতে, সদ্য আঁকা উত্তোলিত পতাকা গেঁথে দিয়েছিল ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলে।
এই মার্চেই মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ইশতেহার, শ্রেষ্ঠতম কবিতা- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
সেদিন থেকেই বাঙালি আর পরাধীন নয়। বাঙালি-বাংলা-বাংলাদেশ মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল সেদিন থেকেই।
১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর তৎকালীন পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করে। বাঙালিরা প্রত্যাশা করে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সরকার গঠিত হবে। কিন্তু নির্বাচনের প্রায় আড়াই মাস পর ১৯৭১ সালের ১ মার্চ সে সময়ের পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খান হঠাৎ করেই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। এ দেশের মানুষ দেখল, বুঝল পূর্ব পাকিস্তানের শাসনভার নিজেদেরকে নিতে দেবে না পশ্চিম পাকিস্তানের শোষক শাসকেরা। তাদেরকে দ্বিতীয় শ্রেনির নাগরিক করেই রাখতে চায় তারা। তখনই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠল এ দেশের মানুষেরা।
১ মার্চ মতিঝিলের পূর্বাণী হোটেলে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের জরুরি বৈঠক। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’ স্লোগান দিতে দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা থেকে মিছিল নিয়ে সমবেত হয় সেখানে। বঙ্গবন্ধু হোটেল পূর্বাণীর ওই জরুরি বৈঠক থেকেই ডাক দেন সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের। ২ ও ৩ মার্চ দেশব্যাপী টানা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ।
২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্বাধীন বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত পতাকা উত্তোলন করে।
৭ মার্চ ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসভায় ব্যাপক কর্মসূচি ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু। উদাত্ত কণ্ঠে নির্দেশ দেন- যার যা আছে, তাই নিয়ে চূড়ান্ত স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে প্রস্তুত থাকতে।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর পাকিস্তানি স্বৈরশাসকরা বুঝতে পারে, বাঙালিকে আর ‘দাবায়ে রাখতে’ পারবে না। এরপর ২৫ মার্চ মধ্যরাতে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হিংস্র পাকিস্তানি সেনারা ইতিহাসের অন্যতম বর্বরতা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। ♦