সুনামগঞ্জে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে হেফাজত সমর্থকদের হামলা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া একটি পোস্টের জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার রাতে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক যুবককে আটকের পর আজ বুধবার স্থানীয় হেফাজতে ইসলাম সমর্থকরা সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়েছেন।
আজ সকালে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নোয়াগাঁও ও তার পার্শ্ববর্তী কয়েকটি গ্রামের কয়েক শ স্থানীয় হেফাজতে ইসলাম সমর্থক হামলা চালিয়ে অন্তত ১৪-১৫টি বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হামলার পর পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন মিলে উত্তেজিত হামলাকারীদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে লুটপাট, আগুন দেওয়া বা শ্লীলতাহানির কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায় নি।’
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে নিয়ে মঙ্গলবার ফেসবুকে কটূক্তিমূলক একটি পোস্ট দেন ওই গ্রামের যুবক ঝুমন দাস আপন। সে রাতেই স্থানীয়রা তাকে স্থানীয় শাঁসকাই বাজারে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেন এবং হেফাজতে ইসলামের স্থানীয় নেতারা এ ঘটনায় একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।’
‘এ অবস্থার মধ্যেই আজ সকালে আশেপাশের কয়েকটি গ্রামের কয়েক শ হেফাজত সমর্থক বাসিন্দা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘবদ্ধ হন। তারপর তারা ওই যুবকের বাড়িসহ আশেপাশের কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে’, বলেন তিনি।
তবে, হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ দায়ের করা হয়নি কিংবা হামলাকারীদের কাউকে আটক করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
স্থানীয় হবিবপুর ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য বিশ্বরূপ দাস ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ঝুমনের দেওয়া স্ট্যাটাসে স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মঙ্গলবার রাত থেকেই হামলার আশঙ্কায় ছিলেন। স্থানীয়দের সহায়তায়ই ঝুমনকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়, যাতে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। তবে, সকালেই কয়েক শ’ হেফাজতরা সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়ে বাড়িঘর ভাঙচুর করে।’
তিনি জানান, হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন স্থানীয় অনিল দাস, হরিপদ দাস, দিগেন দাস, শৈলেন্দ্র দাস, রবিন্দ্র দাস, রন্টু দাস, অসীম চক্রবর্তী, দেবেন্দ্র কুমার দাস, মানকি দাস, নগেন্দ্র কুমার দাসসহ অনেকের বাড়িঘর।
এ বিষয়ে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি মাওলানা আব্দুল বছীর ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘হামলার বিষয়টি শুনেছি। কিন্তু, বিস্তারিত এখনো জানতে পারিনি। তবে, এ ধরনের হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’
তিনি বলেন, ‘যিনি মাওলানা মামুনুল হককে কটূক্তি করেছেন, তাকে স্থানীয়রা পুলিশে সোপর্দ করেছেন। আইনানুগ যে ব্যবস্থা নেওয়ার তা আইন নিবে। কিন্তু, এরপর স্থানীয় নিরীহ মানুষের বাড়িঘরে হামলার বিষয়টি নিন্দনীয়।’
উল্লেখ্য, গত সোমবার শাল্লার পার্শ্ববর্তী দিরাই উপজেলায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখেন হেফাজতের আমীর আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক।❐