আমেরিকা বঙ্গবন্ধুর খুনিকে লালনপালন করছে, তাদের কারবারই এমন : শেখ হাসিনা
যে আমেরিকা মুখে সবসময় মানবাধিকারের কথা বলে, তারাই আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনিকে লালনপালন করছেন বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে ভোট দিয়ে জনগণ সরকার গঠনের সুযোগ দেওয়ায় ফলেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম সম্মেলনে শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) প্রধান অতিথির বক্তৃতায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ করে দিয়েছিল বলেই এই হত্যার বিচার করতে পেরেছি। কিন্তু এখনো কিছু খুনি রয়ে গেছে। আমেরিকায় এক খুনি রয়েছে। তাকে আমরা বারবার আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেহেতু তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে, তাই আমেরিকা সেই খুনিকে লালনপালন করছে। অবশ্য আমেরিকার কারবারই এমন।’
তিনি বলেন, ‘তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে, যে তারা পৃথিবীর যেখানেই থাক, যেভাবেই হোক এদেরকে ধরে এনে এদের সাজা আমরা নিশ্চিত করব, ইনশাল্লাহ। সেটাই আমি চাই।’
বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার বিচারের জন্য দীর্ঘ সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কখনো কোনো হত্যাকাণ্ড হলে আমার কাছে যখন বিচারের দাবি করে, তখন আমার মনে হয় আমার বাবা-মা ভাইদের বিচারের জন্য ৩৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। ৮১ সালে যখন আমি দেশে ফিরে আসি, তখন আমার মামলা করার অধিকার ছিল না, আমার মামলা নেইনি।’
তিনি বলেন, ‘এই যে বিচারহীনতার সংস্কৃতি মানবাধিকারের সংস্কৃতি তখন থেকেই শুরু। তবু আল্লাহ কাছে শুকরিয়া করি এবং জনগণের কাছে কৃতজ্ঞতা জানায় তারা ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ করে দিয়েছিল বলেই এই হত্যার বিচার করতে পেরেছি। কিন্তু এখনো কিছু খুনি রয়ে গেছে। আমেরিকায় এক খুনি রয়ে গেছে। তাকে আমরা বারবার আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যেহেতু তার ফাঁসির আদেশ হয়েছে, তাই আমেরিকা সেই খুনকে লালনপালন করছে। অবশ্য আমেরিকার কারবারই এমন।’
সম্প্রতি মাদকবিরোধী এক অভিযানের উদাহরণ দিতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে যেমন এক ড্রাগ ডিলার, বার বার পুলিশ তাকে ধরতে গেছে, সে হামলা করেছে। র্যাব ধরতে গেছে, হামলা করেছে। ১৪টা মামলার আসামি। ধরতে গেলে বারবার পুলিশের ওপর, র্যাবের ওপর হামলা করে, গুলি করে, তারপর সেও গুলি খেয়ে মারা যায়। তার জন্য আমাদের দেশের কিছু লোক বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে বেড়ায়। অথচ এই ড্রাগ ডিলারদের খোঁজ আনতে গিয়ে, ধরতে গিয়ে আমাদের একজন বিমানবাহিনীর আফিসারকে ধরে নিয়ে গিয়ে অত্যন্ত নির্মমভাবে হত্যা করে। মাত্র কিছুদিন আগের ঘটনা।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ ব্যাপারে তাদের কোনো উদ্বেগ নেই। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর কোনো উদ্বেগ নেই, বা যারা আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, সেই আমেরিকার কোনো উদ্বেগ নেই। কারও কোনো উদ্বেগ নেই। কেমন একটা অদ্ভুত বিশ্ব পরিস্থিতি, সেটা আমাকে অবাক লাগে।’
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডে ক্ষোভ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিজেরা খুনিদের লালনপালন করে, একজন পড়ে আছে কানাডায়, একজন পড়ে আছে আমেরিকায়। আর দুইজন পাকিস্তানে। পাকিস্তারে রশিদ এবং ডালিম। আরেকজনের খবর পাওয়া যাচ্ছে না, কখনো ইন্ডিয়াতে, কখনো জার্মানিতে, সে হচ্ছে মোশলেহ উদ্দিন। তারপরও আমাদের প্রচেষ্টা আছে, যে তারা পৃথিবীর যেখানেই থাক, যেভাবেই হোক এদেরকে ধরে এনে এদের সাজা আমরা নিশ্চিত করবো ইনশাল্লাহ। সেটাই আমি চাই।’
বিকেল ৩টার পরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর ঐতিহাসিক শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আসার পর আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) পঞ্চম সম্মেলন শুরু হয়।
শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা ও স্বাচিপ সভাপতি ইকবাল আর্সেনাল ও মহাসচিব এম এ আজিজ দলীয় পতাকা উত্তলন করেন।
পরে বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে পঞ্চম সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে থিম সং দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। এরপর ডিজিটাল পদ্ধতিতে স্বাচিপ কার্যালয়ের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
সম্মেলন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত আছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সকাল থেকেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেন সারা দেশ থেকে আসা সংগঠনটির হাজারো চিকিৎসক নেতা-কর্মী।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের রমনা কালী মন্দির গেইট, টিএসসি, দোয়েল চত্বরসহ আশপাশের এলাকায় সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সকাল থেকেই সম্মেলনে আসতে শুরু করেন।
তবে জুমার নামাজের পর সম্মেলনে আসা নেতা-কর্মীদের চাপ বৃদ্ধি পেতে থাকে। দীর্ঘদিন পরে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ায় সকাল থেকে সম্মেলনে যোগ দিতে আসা সদস্যদের মধ্যে উৎসবের আমেজ দেখা গেছে।
তাদের গায়ে বিভিন্ন রংয়ের পোশাক, অনেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল আর ‘জয় বাংলা’, ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সম্মেলনস্থলে উপস্থিত হন।
২০১৫ সালে স্বাচিপের সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তখন ইকবাল আর্সলান সভাপতি ও আবদুল আজিজ মহাসচিব নির্বাচিত হন। পরে ১৫১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। গত ৭ বছরে এ কমিটি কোনো সম্মেলন আয়োজন করতে পারেনি। স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) গঠিত হয় ১৯৯৩ সালের ২৪ ডিসেম্বর।