Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
December 6, 2024
হেডলাইন
Homeপ্রধান সংবাদঅসংলগ্ন রাজাকারের তালিকা: মুক্তিযোদ্ধাও রাজাকার!

অসংলগ্ন রাজাকারের তালিকা: মুক্তিযোদ্ধাও রাজাকার!

অসংলগ্ন রাজাকারের তালিকা: মুক্তিযোদ্ধাও রাজাকার!

বরিশালের আইনজীবী তপন চক্রবর্তী একজন তালিকাভুক্ত মুক্তিযোদ্ধা। যিনি নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পান। একাত্তরে তার বাবা সুধীর চক্রবর্তীকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। অথচ তপন চক্রবর্তী ও তার মা শহীদজায়া উষা চক্রবর্তীর নামও এসেছে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় থেকে গত রোববার প্রকাশিত স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায়।

একইভাবে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি মজিবুল হক, বগুড়ায় মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে পরিচিত আইনজীবী মহসিন আলী, আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ, পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব, জয়পুরহাট মহকুমার (সাব-ডিভিশন) সাবেক গভর্নর কছিম উদ্দীন আহম্মেদ, সাবেক জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) মজিবর রহমান আক্কেলপুরি, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা ফরেজ উদ্দীন মাস্টার, প্রয়াত মজিবর রহমান মাস্টার, প্রয়াত তাহের উদ্দীন মাস্টার, প্রয়াত ডা. মহসিন আলী মল্লিক, প্রয়াত হবিবর রহমান, প্রয়াত নজিবর রহমান সরদার, মুক্তিযোদ্ধা আমিরুল ইসলামসহ আরও অনেকের নাম এসেছে স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকায়, যারা  জাতীয় বা স্থানীয়ভাবে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বলে পরিচিত। অনেকে আবার নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাও পাচ্ছেন। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে এ তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযোদ্ধাসহ সংশ্নিষ্টদের পরিবার, স্বজনরা ও সাধারণ মানুষ।

রাজশাহীতে রাজাকারের তালিকায় থাকা গোলাম আরিফ টিপুর নাম নিয়ে গতকাল দিনভর বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে মনে করছেন, তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি অসম্ভব। আমি জানি না, রাজশাহীতে আমার নামে আর কোনো আইনজীবী আছে কি-না। যদিও নামের সামনে বাবার নাম উল্লেখ নেই। তাই এ নিয়ে বলাটাও বিব্রতকর।’

অবশ্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্ত না হতে সংশ্নিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন। এর আগে গত রোববার মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বাধীনতাবিরোধীদের প্রথম তালিকা প্রকাশ করেন মন্ত্রী। তালিকায় ১০ হাজার ৭৮৯ জনের নাম রয়েছে বলে জানানো হয়।

প্রকাশিত ওই তালিকা নিয়ে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘অভিযোগ গুরুতর। কিছু নাম ইতোমধ্যে আমরাও শুনেছি। তদন্ত না করে কিছু বলা ঠিক হবে না। কারণ একই নামে বিভিন্ন ব্যক্তি থাকতে পারেন। তাই যেসব নাম আমরা পেয়েছি, সেগুলো তদন্তের জন্য নির্মূল কমিটির জেলা পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাদের মতামত পাওয়ার পর এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শিগগিরই জানানো হবে। তার আগে তালিকা বিতর্কিত করা ঠিক হবে না।’

একই মত দেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবদুল আহাদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘অনেককেই আমরা স্বাধীনতার পক্ষের হিসেবে জানি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে জানি না। তাই যেসব নাম তালিকায় এসেছে, সেগুলো যাচাই করা প্রয়োজন। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে তাদের ভূমিকা সম্পর্কে। এর পরই তালিকা সঠিক কি-না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে। তবে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বা স্বাধীনতার পক্ষের কারও নাম তালিকায় এলে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী নিজেও একজন মুক্তিযোদ্ধা। তিনি তালিকাকে বিতর্কিত করবেন, এটা বিশ্বাস হয় না।’

পরে এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘একই নাম অনেকের থাকতে পারে। যারা চিহ্নিত মুক্তিযোদ্ধা তারা কেন রাজাকার তালিকায় আসবেন? আমরা তো কোনো তালিকা প্রস্তুত করিনি।’ তার মতে, একটি মহল তালিকা বিকৃত (মন্যুপুলেট) করে ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বিতর্ক করছে। এ নিয়ে বিভ্রান্ত হওয়ার কারণ দেখছি না।’

তালিকায় অসঙ্গতি থাকলে সংশোধন করা হবে কি-না, এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা নিজেরা কোনো তালিকা প্রস্তুত করিনি। একাত্তরে পাকিস্তানিরা যে তালিকা করেছে, যাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পর মামলা হয়েছে, আমরা শুধু তা প্রকাশ করেছি। সেখানে কার নাম আছে, আর কার নাম নেই, সেটা আমরা বলতে পারব না। আর যদি আসেও সেটা পাকিস্তানি বাহিনীর ভুল। যদি মুক্তিযোদ্ধার নাম রাজাকারের তালিকায় এসে থাকে, আমরা সেটা যাচাই করে দেখব।’

বরিশাল সদর উপজেলার ১০৭ জন রাজাকারের তালিকায় মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করার দায়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিহত সুধীর চক্রবর্তীর স্ত্রী প্রয়াত উষা রানী চক্রবর্তীর নাম ৪৫ নম্বর ক্রমিকে এবং তার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা তপন চক্রবর্তীর নাম রয়েছে ৬৩ নম্বরে। বরিশালের সংস্কৃতজন নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, শহীদ সুধীর চক্রবর্তীর পরিবারটি বরিশালের সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক অঙ্গনে দীর্ঘ বছর ধরে অবদান রাখছে। তার নাতনি ডা. মনীষা চক্রবর্তী বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব এবং গত বছর জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে দেশব্যাপী আলোচনায় এসেছিলেন।

মুক্তিযোদ্ধা বাবা ও শহীদজায়া ঠাকুরমার নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় গতকাল দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক আবেগঘন স্ট্যাটাস দেন ডা. মনীষা চক্রবর্তী। এ প্রসঙ্গে মনীষা চক্রবর্তী সমকালকে বলেন, বিষয়টি খুবই বিস্ময়কর। কারণ, আমাদের পরিবার স্বাধীনতার বহু আগে থেকেই প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ রকম একটি পরিবারকে রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা অবশ্যই নিন্দনীয় এবং ষড়যন্ত্র। এর সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানাই।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মহিউদ্দিন মানিক বীরপ্রতীক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ ও হতবাক।

যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এমজি ভুলু বলেন, একজন শহীদের স্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধাপুত্রের নাম রাজাকারের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া দুর্ভাগ্যজনক। বরিশালের জেলা প্রশাসক এস.এম অজিয়র রহমান বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। জেলা প্রশাসন থেকে এই তালিকা দেওয়া হয় নি। তালিকা হাতে পেলে যাচাই-বাছাই করে ভুল-ত্রুটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটির সভাপতি মজিবুল হকের নাম রাজাকারের তালিকায় থাকায় নিন্দা জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ আওয়ামী লীগ নেতারা। গতকাল সরকারি কেএম মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম বলেন, মজিবুল হকের সাহসী ভূমিকার কারণে পাথরঘাটা রাজাকারমুক্ত হয়েছিল। তার নাম রাজাকারের তালিকায় আসায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ সময় উপস্থিত শত শত মুক্তিযোদ্ধা করতালি দিয়ে তার বক্তব্যের সমর্থন জানান।

বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার তালিকাভুক্ত ৩০ জনের মধ্যে অনেকের নাম তালিকায় রয়েছে, যারা মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা। গতকাল দুপুরে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম খান রাজু, সহসভাপতি আবু রেজা খান, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল হামিদসহ উপস্থিত নেতারা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে অবিলম্বে এ তালিকা সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment