আন্তর্জাতিক নারী দিবস
আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। ১৮৫৭ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি সেলাই কারখানায় নারী শ্রমিকরা ভোটাধিকারসহ তাদের মর্যাদার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেশকিছু সুনির্দিষ্ট দাবিতে আন্দোলন করলে তারা পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন। ১৯১০ সালে এ দিনটিকে নারী দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব করেন জার্মান নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন। ১৯১১ সালে প্রথম বেসরকারিভাবে বিভিন্ন দেশে দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
এর দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৪ সালে জাতিসংঘ ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর পর থেকে দিনটিকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো সরকারিভাবে নারী দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশও ৮ মার্চ নারী দিবস পালন করে থাকে এবং দিনটিতে নারী সমাজের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।
নারী আন্দোলনের দীর্ঘ পথপরিক্রমায় নারী সমাজের যথেষ্ট অগ্রগতি সাধিত হলেও জেন্ডার সমতার বিষয়টি এখনও পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। এ চিত্র শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর সর্বত্র দৃশ্যমান। অথচ দেশ কিংবা সমাজের উন্নয়ন নির্ভর করে জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক অবদান ও অংশগ্রহণের ওপর। অর্থাৎ সমাজের অর্ধেক জনগোষ্ঠীর (নারী) অংশগ্রহণ ছাড়া কাক্সিক্ষত উন্নয়ন সম্ভব নয়।
বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে সত্য; কিন্তু তা কাক্সিক্ষত মাত্রার অনেক নিচে অবস্থান করছে। শুধু তাই নয়, নারী নির্যাতন ও বঞ্চনাও উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করা সম্ভব হয়নি। দেশের নারী সমাজ এখনও নানা ধরনের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতন-বঞ্চনার শিকার। শিল্পক্ষেত্রে নারী শ্রমিকের বঞ্চনা একটি আলোচিত বিষয়।
যৌতুক প্রথা, বাল্যবিবাহ, ধর্মীয় কুসংস্কার, পারিবারিক জীবনে পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবের আধিপত্য, প্রথা, মান্ধাতার আমলের মনোকাঠামো ইত্যাদি নারী অগ্রগতির পথে বড় বাধা। এসব অতিক্রম করার নিরন্তর প্রচেষ্টা চলছে দেশে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নেয়া হচ্ছে নানা উদ্যোগ। কিন্তু আবহমানকালের প্রথাগত সামাজিক চিত্রটি একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব হয়ে উঠছে না।
নারীর সমমর্যাদা ও সামাজিক প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধ শক্তিও রয়েছে সমাজে। এ অপশক্তি নারীকে পর্দার অন্তরালে রেখে তাকে পণ্য হিসেবে দেখতেই অভ্যস্ত। ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার সুযোগও রয়েছে তাদের। এ অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে হবে দক্ষতার সঙ্গে। দেশের প্রধান নির্বাহী নারী। জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী। নারী সমাজের উন্নয়নের জন্য এর চেয়ে বড় ইতিবাচক শর্ত আর কী হতে পারে?
বাংলাদেশের সংবিধানসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিমালায় নারীর রাজনৈতিক-সামাজিক ক্ষমতায়ন ও অংশগ্রহণের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। জাতীয় জীবনে নারীর যথাযথ মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার জাতিসংঘ সিডও সনদসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক নীতি ও সনদে স্বাক্ষর করেছে। এতকিছুর পরও কেন পিছিয়ে থাকবে নারীরা?
অনেক দেশে জেন্ডার সমতার ক্ষেত্রে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। বাংলাদেশেও এটা সম্ভব। প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং সেই সদিচ্ছা বাস্তবায়নে দৃঢ় প্রত্যয়। জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও আধুনিক শিক্ষার প্রসার হতে পারে এ সংক্রান্ত কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ উপায়। ♦