‘এসব অর্জন বাংলা ভাষাভাষী সকল মানুষের আনন্দের এবং গৌরবের’
মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আলোচক নিউ ইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা বলেছেন, এসব অর্জন বাংলা ভাষাভাষী সকল মানুষের আনন্দের এবং গৌরবের। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ব জুড়ে বাংলা ভাষা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস প্রতিষ্ঠায় তিনি এ কথা বলেন।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন নিউ ইয়র্কের মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা।
বিশ্বজিত সাহা বলেন, ‘১৯৯২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা ১ মিনিটে মুক্ত ধারা ফাউন্ডেশন এবং বাঙালির চেতনা মঞ্চ যৌথভাবে জাতিসংঘের সদর দপ্তরের সামনে একুশ উদযাপন করার যে কাজটি শুরু করে, তার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালে আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস। সবচেয়ে বড় আনন্দের বিষয় হচ্ছে, ২০০১ সালে নিউ ইয়র্ক স্টেট সিনেট পৃথিবীর অন্য একটি দেশ যারা আমাদের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে রেজলুশন পাশ করে আইন পরিষদের স্বীকৃতি দিয়েছে। এটি বাঙালিদের জন্য একটি বড় গৌরবের বিষয়। আমি আপনাদেরকে জানাচ্ছি ২০১২ সালে যে সপ্তাহে বাংলা বই মেলা হয় আমেরিকাতে সে সপ্তাহটিকে নিউ ইয়র্কের গভর্নর আন্তর্জাতিক বাংলা সপ্তাহ ঘোষণা করে। এসব অর্জন বাংলা ভাষাভাষী সকল মানুষের আনন্দের এবং গৌরবের।
প্রধান আলোচক কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘একুশ মানে মাথা নত না করা, এই চেতনা নিয়ে আমরা সত্তর বছর ধরে একুশের চেতনায় নিজেদেরকে জাগ্রত রেখেছি। আমাদের একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেসকো ঘোষণা দেওয়ার পর থেকে আমরা আমাদের তরুন প্রজন্মকে সবকিছু জানিয়ে প্রদীপ্ত করতে হবে। যাদের কাছে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাষ্ট ব্যবস্থার দায়িত্ব যাবে। যারা চেতনা জাগ্রত করে বহির্বিশ্বে সবকিছু করবে এবং নিজেদের দেশের তেচনা জাগ্রত করবে।’
স্বাগত বক্তব্যে একাডেমির সচিব মো. আছাদুজ্জামান বলেন, ‘একুশ আমাদের বিজয়, একুশ আমাদের ঠিকানা। কারণ আমরা জানি, একাত্তরের ভিত্তি একুশ অর্থাৎ আমরা একুশ থেকেই স্বাধীনতা পেয়েছি। স্বাধিকারের চেতনা একুশ।
প্রধান অতিথি সচিব মো. আবুল মনসুর সচিব বলেন, আপনারা যারা সংস্কৃতিজন, আপনাদের কাছে আমাদের অনুরোধ, সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণকে প্রভাবিত করুন। সাংস্কৃতিক জাগরণের মাধ্যমে আমাদের দেশে স্বাধীন সার্বভৌম সোনার বাংলা গড়ার যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখেছিলেন, সেটাকে অর্থবহ করে তোলার জন্য আপনাদের এগিয়ে আসতে হবে।’
আলোচনা পর্বের পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রথমেই ইয়াসমিন আলীর পরিচালনায় একুশের গান, ‘অপমানে তুমি জ্বলে উঠো’, ‘ইতিহাস জানো তুমি’, ও আমার গানের ভাষা’ শিরোনামে চারটি সমবেত সংগীত পরিবেশন করেন ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। একক সংগীত পরিবেশায় ছিলেন যথাক্রমে দিনাত জাহান মুন্নির ‘৫২ আমার মা ৭১ আমার বাবা। কাদেরী কিবরিয়ার ‘সালাম সালাম হাজার সালাম’, প্রিয়াংকা বিশ্বাসের ‘আমার বর্ণমালা মায়ের মুখের হাসি’ এবং মামুন জাহিদ খান এর ‘ভেবোনা গো মা তোমার ছেলেরা…।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের ধারণকৃত পরিবেশনার ভিডিও উপস্থাপনায় নৃত্য , আবৃত্তি, একক সংগীত, সমবেত সংগীত ও দ্বৈত সংগীত পরিবেশন করা হয়। এতে অংশ নেন কিরগিস্তান, জাপান, ইরান, কোরিয়া, নেপাল, ফ্রান্স, রাশিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালি, আমেরিকা ও বাংলাদেশের শিল্পিরা অংশগ্রহণ করেন।