গরিব মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ ১০%
এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মূল্যস্ফীতির হিসাব নিয়ে বিতর্ক আছে। এখনো ২০০৫-০৬ ভিত্তি বছর ধরে মূল্যস্ফীতি গণনা করা হয়। কিন্তু গত দেড় দশকে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও ভোগের আচরণগত অনেক পরিবর্তন হয়েছে। মানুষের খাবারের ধরন বদলেছে। জীবনযাত্রায় নতুন নতুন অনুষঙ্গ এসেছে। যত দিন পর্যন্ত ভিত্তি বছর পরিবর্তন না হবে, তত দিন প্রকৃত মূল্যস্ফীতির চিত্র উঠে আসবে না।
গত জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশের বেশি হয়েছে। এটি আসলে ধনি-গরিবনির্বিশেষে গড় হিসাব। গরিব মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ বেশি থাকে। আমার হিসাবে গরিব মানুষের ওপর প্রকৃত মূল্যস্ফীতির চাপ ১০ শতাংশের মতো আছে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের আয় না বাড়লে প্রকৃত ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। ফলে দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকা বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যায়।
বর্তমান মূল্যস্ফীতির অন্যতম প্রধান কারণ হলো আন্তর্জাতিক বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়া। এই মূল্যস্ফীতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি কোথায় যায়। কেননা, আমরা আমদানিনির্ভর দেশ। তাই আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির দিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে।
মূল্যস্ফীতি বাড়লে দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। খাদ্যপণ্য কিনতেই তাঁদের আয়ের সিংহভাগ খরচ হয়। বর্তমান চাল-ডাল, তেল-নুন—সবকিছুর দাম বাড়ছে। তাই মূল্যস্ফীতি বাড়লে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সুবিধাভোগী বাড়াতে হবে। তাঁদের সুষ্ঠুভাবে খাদ্যপণ্য বিতরণ নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু বাংলাদেশে গরিব মানুষকে এই ধরনের সুবিধা দিতে গিয়ে তিন ধরনের অপব্যবহার হয়। প্রথমত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে যাঁদের (অপেক্ষাকৃত ধনী) অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা নয়, তাঁরা স্থানীয় রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের আশীর্বাদে তালিকাভুক্ত হয়ে যান। দ্বিতীয়ত, যাঁরা প্রকৃত গরিব, তাঁরা তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন না। তৃতীয়ত, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির তহবিল তছরুপ হয়।
এই সমস্যাগুলো আমাদের অজানা নয়। কিন্তু এই ধরনের অপব্যবহার বন্ধ করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। তাহলে উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে গরিব মানুষকে সুরক্ষা দিয়ে সংকট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
ডলার সঞ্চয় ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিলাসপণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগটি সঠিক। তবে সার্বিকভাবে আমদানি যেন নিরুৎসাহিত না করা হয়। বিশেষ করে শিল্পের কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্যের আমদানি যেন সংকুচিত না হয়। এতে উৎপাদন ব্যাহত হবে। কর্মসংস্থান বিঘ্নিত হবে।
লেখক: অর্থ উপদেষ্টা, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার