Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
July 27, 2024
Homeনিসর্গ ও প্রকৃতিচতুর্থ সেকেন্ড

চতুর্থ সেকেন্ড

চতুর্থ সেকেন্ড

পৃথিবী নামের এই গ্রহটির বয়স প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন বছর। মানুষের? মাত্র এক লক্ষ চল্লিশ হাজার বছর। আসুন ব্যাপারটা একটু অন্যভাবে দেখার চেষ্টা করি। ধরুন, পৃথিবীর বয়স চব্বিশ ঘন্টা, কিংবা একটা পুরো দিন। তাহলে সেই হিসেবে আমরা এই পৃথিবীতে এসেছি মাত্র তিন সেকেন্ড হতে চলল। মাত্র তিনটি সেকেন্ড! অথচ দেখুন আমরা কি করে ফেলেছি! আমরা খুব আহ্লাদিত হয়ে নিজেদের নাম রেখেছি ‘হোমো সেপিয়েন্স’, যার অর্থ দাঁড়ায়- ‘বিচক্ষণ মানুষ, কিন্তু মানুষ কি সত্যিই আসলে বিচক্ষণ? স্মার্ট বলা যেতে পারে। কিন্তু দুঃখজনক সত্য হল, মানুষ তার নিজের জন্যে শুভচিন্তাগুলো করতে পারার মতো যথেষ্ট স্মার্ট নয়।
হ্যাঁ, আমরা পরমাণুকে ভেঙে টুকরো করেছি। হ্যাঁ, আমরা বুদ্ধিমান যন্ত্র নির্মাণ করেছি যেটা মহাশূন্যে আমাদের জন্যে নতুন আবাসস্থল খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু একই সঙ্গে পরমাণুকে ভেঙে টুকরো করতে পারার যোগ্যতা দিয়ে আবার পারমানবিক যুদ্ধ বাধিয়ে দিতে চাইছি। মহাশূন্যে, ছায়াপথে নতুন আবাসস্থল খুঁজতে খুঁজতে আমাদের বর্তমান আবাসস্থল পৃথিবী নামক এই গ্রহটিকে বিপুল অবহেলা আর প্রত্যাখ্যান করে চলেছি। এটি জ্ঞানী মানুষের আচরণ হতে পারে না।
অতএব, না, আমরা মানুষেরা নিজেদেরকে বিচক্ষণ আর জ্ঞানী দাবি করতে পারি না। বিচক্ষণতা ভিন্ন জিনিস। যখন একজন বুদ্ধিমান মানুষ কথা বলবেন, জ্ঞানী মানুষ সেটা শুনবেন। আর দেখুন, আমাদের মাতৃসম এই ধরণী যখন সাহায্যর আর্তনাদে চিৎকার করছে, আমরা দুহাতে নিজের কান চেপে ধরছি। তার সাহায্য চাওয়ার সকল লক্ষণকে উপেক্ষা করে চলেছি। প্রকৃতির করুণ রূপ যখন আমাদের চোখের সামনে ভেসে উঠছে, আমরা চোখ বন্ধ করে ফেলছি। অথচ বিচক্ষণ মানুষদের জানা থাকার কথা, ‘প্রত্যেক ক্রিয়ারই সমান এবং বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে’।
তাহলে আমরা যদি সত্যিই বিচক্ষণ বা বিজ্ঞ হতাম তাহলে পৃথিবীর বুকে বয়ে চলা ঝড়গুলো যে ক্রমশ আগের চাইতে আরও আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে সেটা দেখে বিস্মিত হতাম না। কেননা পরিবেশের দূষণও আগের চাইতে আরও আরও অনেক বেড়ে গেছে। বেড়েছে কার্বন। বেড়েছে বৃক্ষ নিধন, রেকর্ড হারে। বন্যপ্রাণী নিধনকে আমরা স্বাভাবিকের চেয়ে এক হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছি। কি কৃতিত্ব! শিশুদের বইয়ের প্রিয় বন্যপ্রাণী গুলো আগামি দশ থেকে একশ’ বছরের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সিংহ? হারিয়ে গেছে। গন্ডার? হারিয়ে গেছে। বাঘ? গরিলা? হাতি? মেরু ভাল্লুক? তিন সেকেন্ডেই হারিয়ে গেছে! বিভিন্ন প্রজাতির এই প্রাণীগুলো আমাদের চেয়েও পৃথিবীর অনেক পুরনো বাসিন্দা অথচ মাত্র এই তিনটি সেকেন্ডেই আজ এরা হারিয়ে যাবে আমাদেরই কারণে। কি কৃতজ্ঞতাবোধ আমাদের!
সৌরজগতে একমাত্র পৃথিবীতেই প্রাণ বেঁচে থাকতে পারে। আমাদের এই পৃথিবীটাই একটা অলৌকিক ব্যাপার। সৌরজগতে পৃথিবীটা এতটাই নির্ভুল অবস্থানে রয়েছে যে, সূর্যর অতটা কাছেও নয় যে আমরা জ্বলে পুড়ে যাব, আবার ততটা দূরেও নয় যে ঠান্ডায় জমে যাব। আবার প্রয়োজনীয় ওষুধপত্রগুলোও গাছপালা থেকেই আমরা তৈরি করতে পারছি।
কাকতালীয়ভাবে নয়। এখানে সবকিছুই, প্রত্যেক প্রজাতিই, সানফ্লাওয়ার থেকে সানফিশ, জিনগতভাবেই সকলে সকলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।
খুব বেশি দেরি হয়ে যাওয়ার আগে ঠিক এই ব্যাপারটিই আমাদেরকে উপলব্ধি করতে হবে। কেননা সত্যিকার সঙ্কটটি আসলে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা ভূমন্ডলীয় উষ্ণতা নয়, আমরা নিজেরাই। এই যে আমরা প্রতিনিয়ত প্রকৃতি, প্রাণী আর উর্বরতা ধ্বংস করে চলেছি, এটাই।
এই সঙ্কটগুলো আমাদেরই নির্মাণ। আমাদেরই উৎপাদন। আমাদের অভ্যন্তরের লোভের প্রতিফলন। আমাদের দিকভ্রান্ত মনের যোগাযোগহীনতার সৃষ্টি। সাম্রাজ্যবাদ আমাদেরকে এসব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। আমাদেরকে জেগে উঠতে হবে, আমাদের পায়ের নিচ থেকে ধীরে ধীরে আমাদের আবাসনকে টেনে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে, সেটা আমাদেরকে প্রতিহত করতে হবে। মানবিকতার দায়িত্ববোধ থেকে আমরা আমাদের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত, লোভী আর তুচ্ছ মানুষের হাতে তুলে দিতে পারি না।
এটি সাড়ে চার বিলিয়ন বছরের ইতিহাস। ছেষট্টি মিলিয়ন বছর আগে ডাইনোসরসহ পঁচাত্তর ভাগ উদ্ভিদ ও প্রাণীর প্রজাতিদের ব্যাপক বিলুপ্তির ফলে যে বিপর্যয় ঘটেছিল সে বিপর্যয়ের কথা মনে আছে?
সে বিপর্যয়ে জীবন গুহার ভেতর পালিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু পৃথিবী নামের এই গ্রহটি বেঁচে গিয়েছিল। বিবর্তন চলতে লাগল তার নিজের নিয়মে। নতুন নতুন জীবন গঠিত হতে লাগল। তারপর এল সরীসৃপ প্রাণীরা। এখন চলছে প্রাইমেটদের যুগ। অভিধানের ভাষায় প্রাইমেট হলো শ্রেষ্ঠ স্তন্যপায়ী প্রাণী। মানে আমরা। মানুষেরা। কে জানে পরবর্তী যুগটি হয়ত হবে পোকামাকড়ের যুগ! এটি আসলে আমাদের ওপর নির্ভর করে না। এটিকে আপনি চাইলে ঈশ্বর প্রদত্ত বলতে পারেন। প্রকৃতিগতভাবেই এটা হয়ে যায়। বলতে পারেন প্রকৃতির প্রতিশোধ। আমরা এখন এখানে বসে নিজেদের সুযোগ নিতে পারি অথবা এই গ্রহ ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে পারি। তখন পৃথিবী নিজেই নিজেকে নিরাময় করে তুলবে। কেননা এমনটিই হয়ে এসেছে। সবসময় এই গ্রহটি নিজেই নিজেকে নিরাময় করে তুলেছে।
পৃথিবী নামের এই গ্রহটি স্বনিরাময়ী হিসেবেই গঠিত।
পৃথিবী নিজের নিয়মেই পরিবর্তিত হয় এবং বেড়ে ওঠে। একদিন আমাদের ঋণ শোধরাতে বিমূর্ত যা কিছু আছে সকলকিছু নিয়ে পৃথিবী অন্যকিছু হয়ে যাবে। তারপর সূর্যের চারপাশে কমপক্ষে আরও কয়েক বিলিয়ন বছর আবর্তিত হতে থাকবে।
অতএব, ‘সেভ দ্য ওয়ার্ল্ড’ কিংবা ‘গ্লোবাল ওয়ার্মিং’ পরিবর্তনের স্লোগান হিসেবে খুবই অপ্রতুল যেটি আসলে কোন অর্থ বহন করে না। সবার আগে আমাদের নিজেদেরকেই পরিবর্তন করতে হবে।
আমরা নিজেদেরকে শোঁ শোঁ শব্দে বোকার মতো হোমো সেপিয়েন্স ঘোষণা করছি কিন্তু আমরা কখনওই সেটা উপলব্ধি করতে পারছি না। কেননা পুরো ব্যাপারটাই আসলে কাগুজে আর প্লাস্টিকের মতোই কৃত্রিম।
সকলেই কেবল ডলার চায়। চায় প্লাস্টিকের খেলনা। কেউ দায়িত্ব নিয়ে প্রচলিত পদ্ধতিটির পরিবর্তন করতে চায় না। আর সেজন্যই উপলব্ধি করতে পারার আগেই প্রত্যেকটা সেকেন্ডে আমরা শুধু অতলে তলিয়েই যাচ্ছি। আমি আবারও বলছি, আমরা আমাদের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত, লোভী আর তুচ্ছ মানুষের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না।
আমাকে পাগল ভাবুন বা আর যাই ভাবুন, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি নিরাপদ খাদ্য আমাদের অধিকার। আমরা ওই খাদ্য চাই যার উপাদানের নাম আমরা উচ্চারণ করতে পারি। তেমনি নিরাপদ ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে পারাও আমাদের অধিকার। তাহলে বিষাক্ত বায়ুতে আমরা কি করে প্রশ্বাস নেব! এই অধিকারগুলোই তো আমাদের মৌলিক অধিকার। কোনও আলোচনাতে, সভাতে, সমাবেশে, সংসদে এ নিয়ে দরকষাকষি চলে না।
তাদের লক্ষ্য আমাদের দুর্বল করে ফেলা। প্রবাদ আছে, দল বাঁধা প্রজাপতির মৃদু ডানা ঝাপটানোয় যেমন পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে প্রলয় ঘটাতে পারে, ঠিক তেমনি আমরাও যখন সংঘবদ্ধ হয়ে যার যার অবস্থান থেকে অস্তিত্ব রক্ষার লক্ষ্যে প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারব। তখন সেই প্রতিরোধের ঢেউ পুরনোকে ধুয়ে ধরণীতে এক নতুন যুগের সৃষ্টি করতে পারব। আমরা নিজেদের বিচক্ষণ দাবি করি, এবং সত্যিই  যদি আমরা বিচক্ষণ হই তাহলে  এখনই সেটা প্রমাণ করবার সময়। ধ্বংসের এই ভূমিধ্বস ঠেকাতে হবে। নিজেদের পরিবর্তন করা এখন সময়ের দাবি। নয়ত প্রকৃতি নিজেই সেই ছেষট্টি মিলিয়ন বছর আগে ঘটে যাওয়া বিপর্যয়ের পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে পৃথিবীতে অতি প্রত্যাশিত চতুর্থ সেকেন্ডের যাত্রার সূচনা করবে।
ইকবাল বাহার রচিত ‘দ্য ফোর্থ সেকেন্ড’ অবলম্বনে।
Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment