ছাত্রলীগকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ জরুরি
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই যেন বেপরোয়া হয়ে উঠছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন ছাত্রলীগ। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো থেকে একের পর এক খবর আসছে এ ঐতিহ্যবাহী সংগঠনের নানা অপকর্মের।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের অধিকাংশ আবাসিক হলে চলছে ছাত্রলীগের রাজত্ব। সেখানে হলের সিট বরাদ্দ দেওয়ার এবং কাউকে হল থেকে বের করে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করে ছাত্রলীগ। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে গেস্টরুম নামে এক ভয়াবহ সংস্কৃতি চলছে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে।
এর অংশ হিসাবে আবাসিক হলে একটি সিটের আশায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের বিভিন্ন নির্দেশনার কাছে আত্মসমর্পণ করতে হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে হলে ছায়া প্রশাসন চালাচ্ছে ছাত্রলীগ। সিট বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, শিক্ষার্থী নির্যাতন, ভর্তি বাণিজ্য, ছিনতাই, শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে টাকা আদায়-এসব অভিযোগ রয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ও হল শাখা ছাত্রলীগের কিছু নেতার নামে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, ছাত্রী হেনস্তাসহ নানা অপকর্মে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন নিয়ে গ্র“পিং ও সংঘর্ষের কারণে ক্যাম্পাসে শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। শুধু এ কটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, সারা দেশের আরও অনেক উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের এ ধরনের বেপরোয়া আচরণের খবর প্রতিনিয়ত গণমাধ্যমে আসছে। ফলে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রলীগ সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ওপর। কাজেই দলটির শীর্ষ পর্যায় থেকে অবিলম্বে এদিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি আমরা।
আমাদের মনে আছে, ছাত্রলীগের এমন বেপরোয়া আচরণে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও। একপর্যায়ে তিনি ছাত্রলীগের সাংগঠনিক প্রধানের পদ থেকেও সরে দাঁড়িয়েছিলেন। বস্তুত ছাত্রলীগের নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আওয়ামী লীগ ও সরকারের জন্য বিভিন্ন সময় বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে। আর এখন জাতীয় নির্বাচন যখন ঘনিয়ে আসছে, তখন দেশজুড়ে ছাত্রলীগের বেপরোয়া আচরণের প্রভাব মূল দলের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
ছাত্রলীগের এসব অপকর্মের কারণে সরকার তথা সরকারি দলের ভাবমূর্তি যে ক্ষুণ্ন হচ্ছে, দলটির হাইকমান্ডকে এটা উপলব্ধি করতে হবে। ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেগড়া সংগঠন। এ সংগঠনের বিরুদ্ধে অপকর্মের অভিযোগ ওঠা সুখকর নয়।’ যত দ্রুত সম্ভব সম্মেলন করে নতুন নেতৃত্বের হাতে দায়িত্ব দেওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।
বস্তুত, ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণ করে বশে রাখতে না পারলে আগামী নির্বাচনে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আওয়ামী লীগের ওপর। আমরা ঐতিহ্যবাহী ছাত্রলীগকে একটি গণতান্ত্রিক, সংযত ও শিক্ষাবান্ধব সংগঠন হিসাবে দেখতে চাই, সরকারের লাঠিয়াল বাহিনী হিসাবে নয়। সরকারকেও এই উপলব্ধিতে পৌঁছাতে হবে দ্রুত। তা না হলে আখেরে যা ক্ষতি হওয়ার, তা হবে সরকারেরই।