নিউ ইয়র্ক মেয়রের বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ঐতিহাসিক ঘটনা: ফাহাদ সোলায়মান
নিউ ইয়র্ক প্রতিনিধি: মার্চ নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশী অভিবাসীদের জন্যে ছিল একটি বিশেষ দিন। এদিন নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস বাংলাদেশের ৫২তম স্বাধীনতা দিবসকে উপলক্ষ্য করে ‘বাংলাদেশ হেরিটেজ মান্থ’ শিরোনামে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।
গত ২২ মার্চ (বুধবার) আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে পাঁচজন বাংলাদেশী অভিবাসীকে বিশেষ সন্মাননা জানানো হয়। সন্মাননা প্রাপ্তরা হলেন রুতবা তাবাসসুম, রিমা বেগম, প্রিমিয়াম গ্রুপের প্রেসিডেন্ট বাবু খান, শাহ্ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট এবং রূপসী বাংলা ও অনুস্বর সম্পাদক শাহ্ জে. চৌধুরী এবং মূলধারার রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী মো. দেলোয়ার ইসলাম। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা ও স্পন্সর করেন নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের এশীয় উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মেয়র এরিক অ্যাডামসের প্রধান উপদেষ্টা ইনগ্রিড লুইস-মার্টিন, অ্যাসেম্বলি ওমেন জেনিফার রাজকুমার।
মেয়র এরিক অ্যাডামস তার বক্তৃতায় বলেন, আমেরিকায় আপনি এখানে শিক্ষায় বিশ্বাসী, জননিরাপত্তায় বিশ্বাসী, পরিবারে বিশ্বাসী। আমি কোন্ নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর বর্ণনা করছি তা নিয়ে কথা বলতে আপনার কষ্ট হবে কারণ বাংলাদেশি হিসেবে আপনার যাত্রা আমার, আমাদের লক্ষ্য একই। আপনি যদি প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর দিকে তাকান, আপনি দেখতে পাবেন আমেরিকান স্বপ্নে অংশ নিতে তারা পাহাড় পাড়ি দিতে প্রস্তুত হচ্ছে। কেননা আমরা এখানে এসেছি কারণ আমরা বিশ্বাস করি এখানে সুযোগ রয়েছে। তারাও সেই স্বপ্নের পেছনে ছুটতে চায় যে স্বপ্ন আপনিও দেখছেন।
মেয়র বলেন, আমাদের হাজার হাজার চাকরি রয়েছে যা পূরণের অপেক্ষায় রয়েছে। মীরের মতো, আমরা চাই আপনি আপনার সম্প্রদায়ের মধ্যে যান এবং কর্মসংস্থান খুঁজছেন এমন লোকদের খুঁজে বের করুন এবং তাদের শহরের সেবায় যেতে দিন। আমরা বাংলাদেশি পুলিশ অফিসারদের সংখ্যা বাড়াতে চাই যাতে আমাদের সুপারভাইজার থাকতে পারে যারা ডিপার্টমেন্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করবে — ডিওটি, ডিপার্টমেন্ট অফ স্যানিটেশন, এইচপিডি, এই সমস্ত পরিষেবাগুলির। আপনি এই শহর উন্নত করার চেষ্টা হিসাবে বাইরের দর্শক হবেন না. আমরা চাই আপনি আরও অনেকের মতো এই প্রশাসনের অংশ হোন।
মেয়র এরিক অনুষ্ঠানটি স্পন্সর করার জন্য ফাহান সোলায়মানকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, আমি চাই যে আমরা একটি শহর হিসাবে এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমরা এই কাজগুলো চালিয়ে যেতে পারি। আমি আপনার সমর্থন কখনও ভুলবো না। আপনার ভালোবাসা আমি কখনও ভুলবো না। আমি বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের কথা ভুলবো না। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
অ্যাসেম্বলি ওমেন জেনিফার রাজকুমার বলেন, আমরা এখানে প্রথমবারের মতো ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠানে এসেছি, আমাদের কমিউনিটি, দক্ষিণ এশীয় কমিউনিটি আজ এই সিটি হলে সরাসরি কথা বলছে। তারা প্রকৃতপক্ষে মেয়র অ্যাডামসকে দক্ষিণ এশিয়ার মেয়র বলে ডাকে। তিনি আমাদের কমিউনিটিকে দেখেন, তিনি আমাদের বোঝেন, আপনাদের ঢাকা কিংবা জ্যাকসন হেইটস অথবা ওজোন পার্ক এই মেয়র যে আপনাকে মূল্যায়ন করেন। তিনি আমাদের বিশ্বাস করেন, তিনি একজন সত্যিকারের নেতা, একজন মহান নেতা। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে আমি মেয়র অ্যাডামস এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতো মহান নেতাদের কথা স্মরণ করছি। আমি স্মরণ করছি ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধাদের।
ফাহাদ সোলায়মান মেয়র এরিক অ্যাডামসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নিউ ইয়র্ক সিটির কোনো মেয়রের পক্ষ থেকে তার মেয়রের সরকারি বাসভবন গ্রেসি ম্যানশনে এবারই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন। এর আগে নিউ ইয়র্কের আর কোনো মেয়র আমাদের দেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করেন নি। এটি একই ঐতিহাসিক ঘটনা। এবং এই ইতিহাস রচিত হলো কারণ আমাদের এরিক অ্যাডামসের মতো একজন মেয়র আছেন বলেই। কেননা তিনি শুধু মাত্র কোনো একটি নির্দিষ্ট কমিউনিটির মেয়র নন, তিনি নিউ ইয়র্কের প্রতিটি কমিউনিটিরই মেয়র। তিনি নিউ ইয়র্ক সিটির অভভাবক। তিনি আমাদের অভিভাবক। এই কারণেই আমাদের নাগরিক অধিকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ফাহাদ সোলায়মান বলেন, মেয়র এরিক অ্যাডামস গেল শুক্রবারে জ্যাকসন হেইটসের মসজিদে গিয়েছিলেন। এবং এই প্রথমবারের মতো কোনো মেয়র এটা করলেন। এটা শুধুমাত্র বাংলাদেশী মুসলিম কমিউনিটির জন্যে নয়, এটা নিউ ইয়র্কের সকল মুসলমানদের জন্যেই। সেদিন তাকে একটি কোরান উপহার দেওয়া হয়েছে। আমি আশা করছি তিনি সময় করে কোরানটি পড়বেন। তিনি বলেন, কিছুদিন আগে মেয়র তিনি হালাল খাবারের জন্য বিশাল ব্যয় করেছেন এবং স্কুলগুলোতে মুসলিম কমিউনিটির ছেলেমেয়েরা যেন হালাল খাবার পায় সেটি নিশ্চিত করেছেন।
পাঁচ বাংলাদেশীকে সন্মাননা জানানোর বিষয়ে নিউ ইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের এশীয় উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মান বলেন, বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশ কমিউনিটি থেকে যারা উল্লেখযোগ্য কাজ করেছেন এমন পাঁচজন ব্যক্তিকে নিউ ইয়র্ক মেয়রের অফিস স্বীকৃতি দেওয়া দরকার বলে মনে করেছে। তারা সবসময় ভালো কাজ করে গেছেন।
বিশেষ সন্মাননা প্রাপ্ত শাহ্ জে চৌধুরী মেয়র এরিক অ্যাডামস এবং বন্ধু ও মেয়র অফিসের এশীয় উপদেষ্টা ফাহাদ সোলায়মানকে ধন্যবাদ জানিয়ে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, মেয়র এরিক নিউ ইয়র্কের সন্মানিত একজন মানুষ হিসেবে আমার মতো অভাজনকে সন্মানিত করেছেন। তিনি আমাকে যতটা সন্মান জানিয়েছেন, আমার ভেতর থেকে আমি তারচেয়ে অনেক অনেক বেশি সন্মানিত হয়েছি। কেননা আজকের এই অর্জন আমার একলার অর্জন নয়। এই অর্জন আমাদের প্রতিষ্ঠানে যুক্ত থেকে যারা যারা নিরলস কাজ করে চলেছেন- তাদের সকলের।
তিনি বলেন, এই সন্মাননা আমি সকল সহকর্মী ও দেশের সকল মানুষকে উৎসর্গ করলাম। পাশাপাশি সকলের কাছে অনুরোধ, ঠিক এভাবেই আমাকে সমর্থন জানাবেন, উৎসাহিত করে যাবেন যেন এভাবেই দেশের একজন অতি ক্ষুদ্র একজন প্রতিনিধি হিসেবে দেশকে সন্মানিত করে যেতে পারি। একজন বাঙালী হিসেবে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাভাষী সকল মানুষের অর্জন। কেননা আমি কেবল নিউ ইয়র্কে একজন অভিবাসী নই, আমি আমার দেশের ক্ষুদ্রতম একজন প্রতিনিধি।
নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কনসাল জেনারেল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিহত মুক্তিযোদ্ধা ও নিহত বেসামরিক বাঙালি ও অবাঙ্গালিদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের একটি স্মারক আলকচিত্র ফ্রেমে বাঁধিয়ে মেয়র এরিক অ্যাডামসকে উপহার দেন।
অ্যালবাম