নির্যাতনে কানের পর্দা ফেটেছে শিক্ষার্থীর, রাবিতে দৃর্বৃত্তদের আশ্রয়দাতা ছাত্রলীগ
যুবককে কুপিয়ে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামিদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আবাসিক হলে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে ছাত্রলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থার সদস্যরা সাদা পোশাকে ক্যাম্পাসে গেলেও ‘প্রতিবন্ধকতার কারণে’- ফিরে আসতে হয় তাদের। শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া ছাত্রলীগের নির্যাতনে কানের পর্দা ফেটে গেছে শামসুল ইসলাম নামে এক শিক্ষার্থীর। ঘটনার বিষয়ে মুখ খুললে বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো হত্যার হুমকি দেয়া হয় বলেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর অভিযোগ।
সূত্র জানায়, গত বুধবার রাতে নগরীর বালিয়াপুকুর এলাকায় কায়সার জামান শুভ (২৮) নামে একজনকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায় দৃর্বৃত্তরা।
এ ঘটনায় শুভর মা লতিফা বেগম বাদী হয়ে তরিকুল ইসলাম, আদর শেখ, মো. বিপ্লবসহ চারজনের নাম উল্লেখপূর্বক অজ্ঞাত আরও ৮/৯ জনকে আসামি করে বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা করেন। রাতেই আসামি তরিকুল ও ফয়সাল নামে আরেকজন রাবি’র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে অবস্থান নেন। তাদের আশ্রয় দেন রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। সূত্র বলছে, পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সংস্থার কয়েকজন সদস্য সাদা পোশাকে ক্যাম্পাসে যান।
তবে ছাত্রলীগ নেতাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধু হল প্রাধ্যক্ষ সংস্থাটির সদস্যদের হলের ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেননি। যে কারণে ফিরে আসতে হয় তাদের।
এ বিষয়ে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, তরিকুলরা মহানগর ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই আমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রয়েছে। বুধবার রাতে তারা এসেছিল। তবে এরপর তারা কোথায় আছে সঠিক বলতে পারবো না।
এ ব্যাপারে রাবি’র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক শায়খুল ইসলাম মামুন জিয়াদ বলেন, এসব বিষয়ে ফোনে কথা বলতে পারব না, সরাসরি কথা হবে।
এদিকে গত ১৯শে আগস্ট রাবি’র মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে প্রক্টর বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন সামসুল ইসলাম নামের অর্থনীতি বিভাগের এক শিক্ষার্থী। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯ আগস্ট বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের ২৩২ নম্বর কক্ষে তাকে আটকে রেখে প্রায় ৩ ঘণ্টা নির্যাতন করেন ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা। একপর্যায়ে তার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে ২০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন মতিহার হল ছাত্রলীগের এ সাধারণ সম্পাদক। এসব বিষয় সাংবাদিক বা প্রশাসনকে বললে বুয়েটের আবরার ফাহাদের মতো তাকেও মেরে ফেলা হবে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করেন শামসুল ইসলাম।
সবশেষ গত বুধবার আরেকটি আবেদনে তিনি পূর্বের অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে চান। এ বিষয়ে শামসুল ইসলাম বলেন, কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চেয়েছেন ভাস্কর সাহা। এছাড়া আমাকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে চেয়েছেন তিনি। সেজন্য মানবিক দিক বিবেচনায় অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছি।
এ ব্যাপারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, অভিযোগ তুলে নিতে আবেদন করেছে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। তদন্ত কমিটিও গঠন করেছিলাম। কেন সে অভিযোগ তুলতে চাচ্ছে, সেটিও তদন্ত করা হবে।
তবে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, গত বুধবার রাতে কানের ব্যথা নিয়ে হাসপাতালের নাক কান ও গলা বিভাগের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হন শামসুল ইসলাম। বর্ণনা শুনে চিকিৎসকরা কানের পরীক্ষা করতে দেন।
এরপর গত বৃহস্পতিবার পরীক্ষার প্রতিবেদন পান তিনি। কিছু ওষুধপত্র লিখে দিয়ে তাকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেন চিকিৎসকরা। তার ছাড়পত্রে লেখা রয়েছে, ‘Ruptured TM (Left)’। যেটির অর্থ বাম কানের কিছু একটা ফেটে গেছে। এ বিষয়ে রামেক হাসপাতালের নাক কান ও গলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত ঘোষ বলেন, পরীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী ওই রোগীর কানের পর্দা ছেঁড়া।