Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
December 7, 2024
হেডলাইন
Homeবাংলাদেশবাজেট ২০২৩-২৪: ভোটের আগে ‘তৃতীয় যুদ্ধ’

বাজেট ২০২৩-২৪: ভোটের আগে ‘তৃতীয় যুদ্ধ’

বাজেট ২০২৩-২৪: ভোটের আগে ‘তৃতীয় যুদ্ধ’

করোনায় সারা বিশ্বই ছিল বিপর্যস্ত। তা সামলানোর আগেই অর্থনীতিতে নেমে আসে ইউক্রেন যুদ্ধের থাবা। এবার আরেক চ্যালেঞ্জের সামনে বাংলাদেশ সরকার। আসছে জাতীয় নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে গণমুখী বাজেট ঘোষণা কি সম্ভব?

সাধারণ মানুষের ওপর রেকর্ড মূল্যস্ফীতির চাপ আর রাজস্ব আদায়ে অদক্ষতা-এই দুই বাস্তবতা বাজেটের অর্থ সংস্থানকে কঠিন করে তুলেছে। পাশাপাশি আইএমএফের শর্ত বাস্তবায়ন, রিজার্ভ আর ডলার সংকটের মতো বিষয়গুলোও মনে রাখতে হচ্ছে সরকারকে। তাই অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করছেন, নির্বাচনকে মাথায় রেখে জনতুষ্টির বাজেট করা এবার খুব কঠিন।

তবে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমরা জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো। কিন্তু রাজস্ব আয় বাড়ানো ছাড়া উপায় নেই।’

তারপরও এবারের (২০২৩-২৪) বাজেট হবে সবচেয়ে বড়-সাত লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকার। মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা পাঁচ লাখ কোটি টাকা এবং ঘাটতি দুই লাখ ৬১ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিবি) হবে দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের মূল বাজেট ছয় লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকার, যা পরে সংশোধন করে কিছুটা কমানো হয়।

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভ ও ডলার সংকট, আইএমএফের শর্ত-এইসব বিবেচনায় রেখে জাতীয় নির্বাচনের আগে এই বাজেট পেশ করা হচ্ছে। ফলে সরকারকে জনতুষ্টির বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তবে পলিসি রিচার্স ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘‘নির্বাচন সামনে থাকলেও বাজেটে জনতুষ্টির তেমন সুযোগ নেই। আর এত বড় বাজেটের অর্থ কোথা থেকে আসবে সেটাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ। এবার বাজেটের আকার হবে ২৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে ১২ বিলিয়ন বাইরে থেকে এলে এর রি-পেমেন্ট হবে দুই বিলিয়ন। থাকছে ১০ বিলিয়ন ডলার। ডমেস্টিক অর্থনীতি থেকে আরও ১৫ বিলিয়ন ডলার জোগাড় করতে হবে। মানে এক লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। আমাদের রাজস্ব-ঘাটতি আছে। এখানে তো অনেক চ্যালেঞ্জ। এত টাকা তো দিতে পারবে না। তাহলে কী হবে? আমাদের টাকা ছেপে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। তাতে অর্থনীতি দুর্বল হবে, মূল্যস্ফীতি আরও বাড়বে, বাজারে চাপ সৃষ্টি হবে।’

সিপিডির ডিস্টিংগুইশড ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঘাটতি বাজেটের অর্থায়ন কীভাবে হবে এটা অবশ্যই একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এই অর্থ কোথা থেকে সরকার জোগাড় করবে, এটা কি ব্যাংকিং সেক্টর থেকে ঋণ নেবে, না কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেবে, না বৈদেশিক ঋণ নেবে সেটা সরকারকে নির্ধারণ করতে হবে।’

চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস, অর্থাৎ জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। আর ১২ মাসে এই ঘাটতি হতে পারে ৪০ হাজার কোটি টাকা।

এর বাইরে আরও যে বড় চ্যালেঞ্জ আছে তা হলো উচ্চ মূল্যস্ফীতি। এখন মূল্যস্ফীতির সাধারণ হার ৯.৩৩। খাদ্যপণ্যে এটা আরও বেশি। এই মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকের আয় কমেছে, ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। আর সেজন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বিস্তৃতি ঘটাতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সক্ষমতা যদি না বাড়ানো যায়, তাহলে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট পূরণ হবে না। উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন এই অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে মাত্র ৫০ ভাগ হয়েছে। বিদেশি ঋণের যেসব প্রকল্প পাইপ লাইনে আছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হলে তার একটা প্রভাব রিজার্ভে পড়বে।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন, ‘নির্বাচনের আগে বাজেট হলেও তথাকথিত জনতুষ্টির বাজেট করার সুযোগ নাই।তবে সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনি বাড়াতে হবে। সাধারণ মানুষের ওপর প্রভাব পড়ে এমন পণ্যে হয়তো নতুন কর আরোপ করা হবে না। তবে বিলাস পণ্যে কর বাড়বে। করমুক্ত আয়সীমা বাড়তে পারে।’

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলেও এটা নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয়। প্রকৃত অর্থে কোনো জরিপও করা হয়নি যে কী পরিমাণ মানুষ মূল্যস্ফীতির চাপে আছে। এখন বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম কমে এলেও এখানে কমছে না। এই প্রেক্ষাপটে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি বিস্তৃত করতে হবে।

তার কথা, ‘গত দুই-তিন বছর ধরে দেখা যাচ্ছে রাজস্ব আদায় পিছন দিকে হাঁটছে। আর নানা ধরনের অর্থনেতিক অব্যবস্থাপনাও দেখা গেছে। বিশেষ করে বিনিময় হার, সুদের হার-এইসব বিষয়ে যথা সময়ে যথা সিদ্ধান্ত না নিতে পারার কারণে আমাদের সামষ্টিক অর্থনীতি বড় ধরনের চাপের মুখে আছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতে যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো করা হয়নি।’

আগের নির্বাচনগুলোর সময় অর্থনীতি এত বহুমুখী চাপের মুখে ছিল না। এবার আইএমএফের শর্তগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে জনতুষ্টির ভাবনা দূরে রাখতে হবে। ভর্তুকি নিয়ে সরকার উভয়সংকটে আছে। রপ্তানি আর রেমিট্যান্সও খুব যে ভালো অবস্থায় আছে তা মনে করেন না অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি মনে করেন,জাতীয় প্রবৃদ্ধিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হবে।

এসব অনেকটা মেনে নিয়েই পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমাদের রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের বড় বড় বেশ কিছু প্রকল্প শেষের দিকে আছে, সেখানে বেশ টাকা দিতে হচ্ছে। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি নিয়ে মানুষের আশা আরও বাড়ছে। আর মূল্যস্ফীতি, ডলারের দাম বেড়ে গেছে। বাইরে থেকে অনেক কিছু আনতে হয়। এগুলো আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ।’

তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে যেমন নিত্য পণ্যের দাম বেড়েছে তেমনি দেশের ভেতরে সাপ্লাইচেইন বাধাগ্রস্ত করেও সংকট বাড়ানো হয়েছে।’

তার কথা, ‘আমরা চলমান জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলো অব্যাহত রাখবো। আর আশা করি বাজেটর অর্থ সংস্থান নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি এতদিন মিথ্যাচার করে আসছে—এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়, সেটি মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।’

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে কোনোভাবেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না।’

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার নিজেদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন দেখানোর চেষ্টা করেছে বলে মন্তব্য করছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।

জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা সংস্করণের হয়ে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন হারুন উর রশীদ স্বপন। এই প্রতিবেদনের সব ধরনের দায়ভার ডয়চে ভেলের।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment