Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
July 25, 2024
Homeঅর্থনীতিমাথা চারা দিচ্ছে ‘খাদ্য জাতীয়তাবাদ’, রপ্তানি বন্ধের পথে অনেক দেশ

মাথা চারা দিচ্ছে ‘খাদ্য জাতীয়তাবাদ’, রপ্তানি বন্ধের পথে অনেক দেশ

মাথা চারা দিচ্ছে ‘খাদ্য জাতীয়তাবাদ’, রপ্তানি বন্ধের পথে অনেক দেশ

ভারত কয়েকদিন আগে গমের রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর বুধবার চিনির রপ্তানিও অনেকটা কমিয়ে দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে।

বিশ্বের এক নম্বর চিনি উৎপাদনকারী দেশটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে অক্টোবর পর্যন্ত বড়জোর এক কোটি টন চিনি রপ্তানি করা হবে ও রপ্তানির আগে ব্যবসায়ীদের সরকারের কাছে থেকে অনুমতি নিতে হবে।

সঙ্গে সঙ্গেই আন্তর্জাতিক বাজারে চিনির দাম এক শতাংশ বেড়ে যায়। এমনিতেই জানুয়ারি থেকে আন্তর্জতিক বাজারে চিনির দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ, এবং গত বছরের এ সময়ের চেয়ে বর্তমান দাম ২৬ শতাংশ বেশি।

তার দুদিন আগে মালয়েশিয়া জানিয়েছে জুন মাস থেকে তারা মুরগি এং মুরগির মাংসের রপ্তানি কমিয়ে দেবে কারণ দেশের ভেতরই ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর আগে ইন্দোনেশিয়া পাম অয়েল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।

খাদ্য রপ্তানির ওপর এমন একের পর এক বিধিনিষেধ এমন সময় আরোপ করা হচ্ছে যখন ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে বিশ্বের খাদ্যের বাজারে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সংকট তৈরি হয়েছে।

সিঙ্গাপুরে বিবিসির সংবাদাদাতা আনাবেল লিয়াং বলছেন সেখানকার শীর্ষ এখন অর্থনীতিবিদ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে এশিয়ার অনেক দেশে এক ধরণের ‘খাদ্য জাতীয়তাবাদ’ মাথা চাড়া দিচ্ছে। এসব দেশে নিজের অভ্যন্তরীণ বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চিন্তায় বাকি দেশগুলোর প্রয়োজনকে অগ্রাহ্য করছে।

যেমন মালয়েশিয়ায় সাম্প্রতিক কয়েক মাসে মুরগির মাংসের দাম ক্রমাগত এমনভাবে বাড়ছে যে ক্রেতাদের ওপর মাংস কেনার সর্বোচ্চ মাত্রা বেঁধে দেয়া হচ্ছে।

মালয়েশিয়া প্রতি মাসে ৩৬ লাখ মুরগি রপ্তানি করে। সোমবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব বলেন ‘অভ্যন্তরীণ বাজারের দাম এবং উৎপাদন স্থিতিশীল না হওয়ার পর্যন্ত’ রপ্তানি বন্ধ থাকবে।

তিনি খোলাখুলি বলেন, দেশের মানুষের প্রয়োজন সরকারের এক নম্বর অগ্রাধিকার। সিঙ্গাপুরে মুরগির চাহিদার এক-তৃতীয়াংশই আসে মালয়েশিয়া থেকে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই সেদেশে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুরে সিংহভাগ মুরগি আসে জীবিত অবস্থায়। সেগুলো সিঙ্গাপুরে জবাই করে বাজারে নেয়া হয়।

সোমবার মালয়েশিয়ার এই সিদ্ধান্তের পর সিঙ্গাপুরের খাদ্য কর্তৃপক্ষকে বাজারে প্যানিক বায়িং ঠেকানোর ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। মানুষজনকে হিমায়িত মুরগি কেনার এবং ‘যতটুকু প্রয়োজন” ততটা কেনার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতি
মালয়েশিয়ার মুরগি রপ্তানি বন্ধ, ভারতের গম রপ্তানি নিষিদ্ধ বা চিনি রপ্তানিতে রাশ টানা – এগুলো বিশ্বের চলতি খাদ্য সংকটের দুই-চারটি নমুনা মাত্র। খাদ্যের বাজারের সামগ্রিক পরিস্থিতি সংকটজনক। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক হুঁশিয়ার করেছে যেভাবে রেকর্ড হারে বাজারে খাদ্যের দাম বাড়ছে তাতে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্য ও পুষ্টিহীনতার কবলে পড়বে।

ইউক্রেন বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গম রপ্তানিকারক দেশ। কিন্তু বিশ্ববাজারে সেদেশ থেকে গম আসা প্রায় বন্ধ। ফলে গমের বাজারের দাম বেড়েই চলেছে, এবং মিশরের মত যেসব দেশ তাদের খাদ্যের জন্য ইউক্রেনের গমের ওপর নির্ভরশীল, তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইউরিয়া স্বিরিদেঙ্কো বিবিসিকে বলেন তার দেশে লাখ লাখ টন খাদ্যশস্য গুদামে পড়ে আছে, এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিৎ একটি ‘সেফ প্যাসেজ’ তৈরি করে সেগুলো রপ্তানির একটি ব্যবস্থা করা।

রাশিয়া বলছে তারাই ইউক্রেনের খাদ্যশস্য রপ্তানি নিশ্চিত করবে যদি তাদের ওপর চাপানো নিষেধাজ্ঞা আমেরিকা ও ইউরোপ প্রত্যাহার করে। তেমন প্রস্তাব এখন পর্যন্ত আমেরিকা শুনতেই চাইছে না। ফলে ইউক্রেনের গম আর ভোজ্য তেলের বীজ বিশ্ববাজারে অনিশ্চিত।

জাতিসংঘ খাদ্য সংস্থার পরিচালক ডেভিড বিজলি বিবিসির কাছে মন্তব্য করেছেন ইউক্রেনের খাদ্য রপ্তানির ওপর রাশিয়া যেভাবে অবরোধ তৈরি করেছে, তা বিশ্বের ‘খাদ্য নিরাপত্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল’।

তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীর সামনে সবচেয়ে ভয়াবহ খাদ্য সংকট তৈরি হয়েছে। বিশ্বের ৪০ কোটি মানুষ ইউক্রেনে উৎপাদিত খাদ্যের ওপর কম-বেশি নির্ভরশীল, এবং সেই দেশের খাদ্য রপ্তানি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে রয়েছে সারের সমস্যা, খরা, মূল্যবৃদ্ধি, জ্বালানির সংকট। পরিণতিতে আমরা এখন বিশ্বে বড়রকম দুর্যোগ নেমে আসার আশংকা করছি।

মাথাচাড়া দিচ্ছে ‘খাদ্য জাতীয়তাবাদ’
এ মাসের গোড়ার দিকে ভারত গমের রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর আবারো গমের বাজারে দাম বেড়েছে। খরার কারণে দেশের ভেতর রেকর্ড মাত্রায় দাম বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন সরকার সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয়।

শুধু ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, অস্বাভাবিক খরা ও বন্যায় অনেক দেশে ফসল উৎপাদন হুমকিতে পড়েছে। অনেক ব্যবসায়ী আশা করছিলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে ঘাটতি শস্যের বাজারে দেখা দিয়েছে ভারত থেকে বাড়তি আমদানি করে সেই ঘাটতি হয়তো মেটানো যাবে। কিন্তু তা হচ্ছে না।

শুধু গম বা চিনি নয়, পাম অয়েলের দামও হুহু করে বেড়ে যায় যখন ইন্দোনেশিয়া অভ্যন্তরীণ ভোজ্য তেলের বাজারে দাম সামলাতে তিন সপ্তাহের জন্য রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। বিভিন্ন দেশের সরকার খাদ্য রপ্তানি যেভাবে নিষিদ্ধ করছে তাকে ‘খাদ্য জাতীয়তাবাদ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউ স্কুল অব পাবলিক পলিসির সহকারী অধ্যাপক সোনিয়া আক্তার।

বিবিসির আনাবেল লিয়াংকে তিনি বলেন, সরকার এসব বিধিনিষেধ আরোপ করছে কারণ তারা মনে করছে তাদেরকে প্রথম নিজের জনগণকে রক্ষা করতে হবে।

অধ্যাপক আক্তার বলেন, ২০০৭-২০০৮ সালের খাদ্য সংকটের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় আবারো এসব দেশ এ ধরণের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার পথে যাবে। এর ফলে খাদ্য সংকট বাড়তে থাকবে এবং বাজারে খাবারের দাম বাড়তে থাকবে।

বাংলাদেশের উপায় কী
লন্ডনে অর্থনীতিবিদ ও জাতিসংঘ উন্নয়ন সংস্থা বা ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন রিপোর্ট অফিসের সাবেক পরিচালক ড. সেলিম জাহানও মনে করেন, খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অতি সাবধানতার লক্ষণ স্পষ্ট হচ্ছে। খাদ্য জাতীয়তাবাদকে মোকবেলা করতে এই মুহূর্তে খাদ্য কূটনীতি অত্যন্ত জরুরি, বলেন অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম জাহান।

সন্দেহ নেই যে রাজনৈতিক জাতীয়তাবাদের মতই খাদ্য জাতীয়তাবাদ মাথা চাড়া দিচ্ছে। দেশগুলো নিজেদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করছে, অন্যের প্রয়োজন গৌণ হয়ে পড়েছে, বিবিসি বাংলাকে বলেন ড. জাহান।

ভারত চিনি রপ্তানি সীমিত করলে এমনকি আফ্রিকার অনেক দেশের জন্য তা বড় চিন্তার কারণ তৈরি করবে। কিন্তু ভারত হয়তো এখন সেটা ভাবতে রাজি নয়। ভারত সরকার অবশ্য বলছে, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দিলেও সংকটাপন্ন কিছু দেশের প্রয়োজন তারা অগ্রাহ্য করবে না।

ড. জাহান মনে করেন, শ্রীলঙ্কার খাদ্য সংকট ও তার ফলে সৃষ্ট দাঙ্গা-হাঙ্গামা দেখে আঞ্চলিক অনেক দেশের মধ্যে ভয় ঢুকেছে, এবং তারা সাবধান হয়ে পড়ছে।

বিশ্বায়নের জেরে কয়েক দশক ধরে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় একরকম ভাগাভাগি তৈরি হয়েছে। যে দেশে কোনো পণ্যের উৎপাদন অন্যদের চেয়ে সুবিধাজনক তারাই সেটি বেশি করে তৈরি করছে এবং তাদের উদ্বৃত্তের ওপর বাকি অনেক দেশ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

ড. সেলিম জাহান বলেন, প্রধান কিছু খাদ্য উদ্বৃত্ত দেশগুলো হঠাৎ করে সাবধানী হয়ে গেলে বাকিদের জন্য তা বিপদ তৈরি করবে।

বাংলাদেশের মতো দেশ যাদেরকে ঘাটতি মেটাতে ভোজ্য তেল, গম, চিনি ডাল, মসলা সহ অনেক নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য আমদানি করতে হয়, তাদের জন্য বর্তমান খাদ্য পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের কারণ?

ড. সেলিম জাহান মনে করেন বাংলাদেশের জন্য এটি ‘অশনি সংকেত’। বাংলাদেশ বহুদিন ধরেই একটি বা দুটি খাদ্যশস্য উৎপাদনের ওপর জোর দিচ্ছে। এখন রপ্তানিকারকরা যদি নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে থাকে, তা ভয়ের ব্যাপার।

কারণ, আমদানি ব্যয় বাড়বে এবং সেই সঙ্গে বাড়বে বাজারের খাবারের দাম – যার পরিণতিতে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র মানুষের খাদ্যে ক্রয়ক্ষমতা মারাত্মক চাপে পড়বে।

তিনি বলেন, অনেক খাদ্যের জন্য ভারতের ওপর অতি-নির্ভরতা বাংলাদেশেকে বিপদগ্রস্ত করে তুলতে পারে। তারা (ভারত) গম বিক্রি বন্ধ করেছে করেছে। আজ তারা (ভারত) চিনি বিক্রি কমাচ্ছে, কাল যদি পেঁযাজ বন্ধ করে, পরশু যদি ডাল বন্ধ করে তাহলে কি হবে?

ড. জাহান মনে করেন, বাংলাদেশকে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যের মজুদ গড়ে তুলতে হবে। চাহিদা জানা আছে। যে কোনো ভাবে আমদানি করে একটা মোটামুটি পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করতে হবে। তার মতে, এজন্য বাংলাদেশের জন্য এখন জোরালো কূটনীতির পথ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

দরকার শক্ত ‘খাদ্য কূটনীতি’
খাদ্য জাতীয়তাবাদকে মোকবেলা করতে এই মুহুর্তে খাদ্য কূটনীতি অত্যন্ত জরুরি, বলেন ড. জাহান।

বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে আমদানির ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের সাথে দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছাড়-সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতে হবে। এবং সেটা দ্রুত করতে হবে। অনেক দেশ সেই চেষ্টা করছে , ফলে যারা আগে করবে তাদের সাফল্যের সম্ভাবনা বেশি থাকবে। পিছিয়ে গেলেই সমস্যা।

তবে সিঙ্গাপুর নানইয়াং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক উইলিয়াম চেন কিছু দেশের খাদ্য রপ্তানি হ্রাসের পদক্ষেপে এখনও ততটা উদ্বিগ্ন হতে রাজি নন।

তিনি মনে করেন, রপ্তানির ওপর এমন বিধিনিষেধ আরোপ সাময়িক। অনেক দেশই খাদ্য রপ্তানি নিষিদ্ধ করে পরে তা আবারো প্রত্যাহার করেছে। কোনো দেশই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কোনো কোনো খাদ্যের জন্য তাদের অন্যের ওপর নির্ভর করতেই হবে।

অধ্যাপক উইরিয়াম চেন মনে করেন, শতভাগ খাদ্য জাতীয়তাবাদের পথ নেয়া কোনো দেশের পক্ষেই সম্ভব নয়।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment