যুক্তরাষ্ট্রে করোনার বিধিনিষেধ উঠছে, সীমান্তে অভিবাসীদের কী হবে
করোনা মহামারির সময় যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসী প্রবেশে যে নিষেধাজ্ঞা ছিল, তার সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার রাতে। তবে নতুন নিয়মের বেড়াজালে মেক্সিকো সীমান্তে অবস্থান করা অভিবাসনপ্রত্যাশীরা অনিশ্চয়তায় পড়েছেন। আটকে আছেন সীমান্তসংলগ্ন এলাকায়।
এসব অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বেশির ভাগ উত্তর, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন। এশিয়ার বিভিন্ন দেশেরও কিছু অভিভাসনপ্রত্যাশী রয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পর যাতে মেক্সিকো সীমান্তে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢেউ মোকাবিলায় সেনা মোতায়েন করেছে ওয়াশিংটন।
করোনা মহামারির সময় থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে কাড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছিল। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে সেই নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, অবৈধ উপায়ে কেউ যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করলে দীর্ঘমেয়াদি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়তে পারেন। ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগও আনা হতে পারে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী আলেহান্দ্রো মায়োরকাস সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আমাদের সীমান্ত খোলা নেই।’
সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর থেকে আসা জিমি মুনোজ। ২৯ বছরের জিমি বলেন, ‘আশা করছি, আমি এই দেশে থেকে যেতে পারব। কিন্তু তারা (মার্কিন প্রশাসন) আমাকে অনুমতি দেবে কি না, সেটা নিয়ে সন্দেহ ও ভয় রয়েছে।’
টেক্সাসের ব্রাউনভিলে একটি বাসে বসেছিলেন প্যাট্রিসিয়া ভারগাস। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভেনিজুয়েলা থেকে এসেছেন তিনি। প্যাট্রিসিয়া সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পেরেছেন। কিন্তু সীমান্তের ওপারে আটকে গেছেন প্যাট্রিসিয়ার ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতি–নাতনিরা।
এরপর ভাগ্যে কী হবে, তা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন প্যাট্রিসিয়া। তিনি বলেন, পাঁচজন একসঙ্গে এসেছিলাম। এখন আমি একাই এ দেশে ঢুকতে পেরেছি। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কবে, কোথায় দেখা হবে, জানি না।
টাইটল–৪২
তিন বছরের বেশি সময় ধরে মেক্সিকোর সঙ্গে ৩ হাজার ২০০ কিলোমিটার (২ হাজার মাইল) সীমান্ত এলাকায় যুক্তরাষ্ট্র টাইটল–৪২ বিধি জারি রেখেছিল। এই বিধির আওতায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে বৃহস্পতিবার রাত থেকে জরুরি কোভিড–১৯ বিধিনিষেধ উঠে যাচ্ছে। এতে টাইটল–৪২ বিধিও উঠে যাচ্ছে। এজন্য বাইডেন প্রশাসন নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে।
সীমান্তে অভিবাসীদের ঢেউ ঠেকাতে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে বাইডেন প্রশাসন। এখন কেউ অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে চাইলে তার ওপর পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা জারি বা তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হবে।
যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য দেশে অভিবাসন প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। হাইতির মতো কয়েকটি দেশে বিশেষ শরণার্থী কর্মসূচি চালুর পাশাপাশি সাময়িক কাজের অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। তবে কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে, তা পরিষ্কার নয়।
যুক্তরাষ্ট্র আশ্রয়প্রার্থীদের স্মার্টফোনে অ্যাপের মাধ্যমে সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। তবে অবশ্য আশ্রয়প্রার্থীরা এই অ্যাপ খুব একটি জুতসই নয় বলে অভিযোগ তুলছেন। তাঁরা বলছেন, অ্যাপটি ঠিকমতো কাজ করে না। আবার ওয়াই–ফাই ছাড়া এই অ্যাপ চালানোর কোনো উপায় নেই।
ভেনেজুয়েলা থেকে আশ্রয়প্রার্থী ২১ বছর বয়সী জেরেমি দে পাবলোস বলেন, কী আশ্চয়! একটি অ্যাপ আমাদের জীবন আর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দিচ্ছে।
তবে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী অ্যাপের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, প্রযুক্তিগত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এএফপি