Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
December 9, 2024
হেডলাইন
Homeযুক্তরাষ্ট্রযুদ্ধের হালখাতায় এখনো বকেয়া শান্তি

যুদ্ধের হালখাতায় এখনো বকেয়া শান্তি

যুদ্ধের হালখাতায় এখনো বকেয়া শান্তি

ইউক্রেনে রাশিয়ার চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধ বা সামরিক অভিযানের দশ মাস পেরিয়ে গেছে। ২০২২ সালের দ্বিতীয় মাসে শুরু হওয়া কথিত সেই যুদ্ধ এখন নতুন আরেকটি বছরে। কূটনৈতিক টেবিল থেকে ছিটকে যুদ্ধের ময়দানে নামা রাশিয়া ও ইউক্রেন এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সমান তালে। শুরুর দিকে রাশিয়ার কাছে হাতছাড়া হওয়া অনেক অঞ্চলই ফের এসেছে ইউক্রেনের দখলে। মাঝে কিছুদিন পিছু হটলেও বছরের শেষ সময়ে হামলার গতি বাড়িয়েছে রাশিয়া। এতদিন ধরে এসব হামলাকে সামরিক অভিযান আখ্যা দেওয়া রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন।

বিশেষ করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্র সফরের পর যুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। শান্তি আলোচনার জন্য জেলেনস্কির দেওয়া দশ দফা প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে ক্রেমলিন। অবশ্য গত দশ মাসে যুদ্ধ থামানোর কার্যকর উদ্যোগও সেভাবে নেওয়া হয়নি। শুরু দিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ কিছুটা চেষ্টা করেছেন। পরে তুরস্ক আর ইসরায়েল কিছু উদ্যোগ নিলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। উল্টো যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদেশগুলো এবং তাদের সামরিক জোট ন্যাটো চেয়েছে যুদ্ধ টিকে থাকুক।

পুতিন পিছু হটছেন না মূলত তার দম্ভের কারণে। তিনি আগ্রাসন করার চেয়ে ওই এলাকায় আধিপত্যকেই বেশি গুরুত্ব দেন বলেই মনে হয়। তার চাওয়া ইউক্রেন কোনো ক্রমেই যেন ন্যাটোর সদস্য হতে না পারে। সেটি দেশের নিরাপত্তার জন্য যেমন হুমকি তেমনি পুতিনের আধিপত্যও খর্ব করবে। তিনি কোনো মতেই সেটি চান না বলেই, অভিযানের যুক্তি হিসেবে নব্য নাৎসি, দনবাস এলাকার রুশ জাতিগোষ্ঠীকে ঝুঁকিমুক্ত করার দোহাই দিয়েছেন।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা চাইছে লাঠি না ভেঙেই সাপ মারতে। একই সঙ্গে লাঠির বিক্রিও বাড়াতে চাইছে তারা। স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (এসআইপিআরআই) তথ্য মতে, বিশ্বের শীর্ষ ১০০ প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্ত্র ও সামরিক সেবা বিক্রির পরিমাণ যুদ্ধের প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে।

উল্টো সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে দেশে দেশে দেখা দিয়েছে খাদ্য ও জ্বালানির সংকট । এশিয়া ও আফ্রিকার অনেক দেশ পড়েছে মন্দা-মঙ্গার কবলে। জ্বালানি সংকটে আসন্ন শীতে ই্উরোপের মানুষ কতটা ভয়ংকর পরিস্থিতি পড়তে পারে তার হিসাব মেলাতে এখনো অনেকে হিশশিম খাচ্ছেন। অনেকে বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এমন পরিস্থিতিতে আর কখনো পড়েনি ইউরোপ। বিশ্বযুদ্ধ না হলেও বিশ্বায়নের যুগে এ যুদ্ধ প্রভাব রেখেছে ভয়ংকর। পরিসংখ্যানগত ক্ষয়ক্ষতি কম হলেও এর অভিঘাত বিশ্বযুদ্ধোত্তর প্রজন্মের মতোই বয়ে বেড়াতে হবে বর্তমান এবং আগামীকে।

সবচেয়ে বেশি ক্ষতিটা অবধারিতভাবেই হবে ইউক্রেনের। গেল কয়েক মাস ধরেই ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি স্থাপনাগুলো লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে রাশিয়া। দেশটির বিভিন্ন শহরের লাখ লাখ মানুষের দিনরাত কাটছে বিদ্যুৎ ছাড়াই। ওদিকে পশ্চিমাদের দেওয়া অস্ত্র সহায়তাও দীর্ঘদিন ধরে চলবে না। আগামী কয়েকটি মাস তাদের আসলেই অস্তিত্বের লড়াই করতে হবে।

যুদ্ধটা গত ফেব্রæয়ারি মাসে শুরু হলেও হিসাবের ভুল হচ্ছিল আরও আগে থেকেই। আফগানিস্তান ছেড়ে আসা যুক্তরাষ্ট্র চাইছিল নতুন কোনো এলাকায় যুদ্ধ শুরু হোক। এ কারণে তারা নানা ধরনের উসকানিও দিয়েছে পুতিনকে। শেষ অবধি পুতিনও হিসাব না মিলিয়েই পা দিয়েছেন ফাঁদে। শুরুতে তিনি ভেবেছিলেন খুব অল্প সময়েই মধ্যেই ইউক্রেন সরকারের পতন ঘটিয়ে নিজের পছন্দের লোক বসাবেন কিয়েভের মসনদে। কিন্তু সে হিসাবটা ভুল করেছিলেন তিনি।

ইউক্রেন শুরুর দিকে কোণঠাসা হলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অন্তত ৩০টি দেশ থেকে পাওয়া সামরিক ও আর্থিক সুবিধার সর্বোত্তম ব্যবহার করেছে। সমর বিশেষজ্ঞদের দশ দিনের যুদ্ধের হিসাব দশ মাসে গড়িয়েছে। ইউক্রেনীয়দের এই লড়াকু মনোভাব চমকে দিয়েছে সবাইকেই। ইউক্রেনকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারে সহায়তা ও অস্ত্র সরবরাহ করেছে পশ্চিমা মিত্ররা। কিন্তু এখানে ইউক্রেন হিসাব করছে না, এসব ঋণ সহায়তা শোধ করতে যুদ্ধোত্তর সময়েও নতুন নতুন শর্তের জালে জড়াতে হবে?

অবশ্য ইউক্রেনের প্রতি সংহতি-সহায়তা দিয়ে গেলেও পশ্চিমা বিশ্ব সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘাত এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে এসেছে। নিজেদের হিসাব মেলাতে তারা ইউক্রেনকে এমন অনেক অস্ত্র সরবরাহ করেনি, যেগুলো রাশিয়ার ওপর পালটা হামলা চালানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। অন্যদিকে অভ‚তপূর্ব পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা ও অপ্রত্যাশিত সামরিক ব্যর্থতার পরও রাশিয়া দমে যায়নি।

তেল, গ্যাস ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ রপ্তানি বাবদ আয় কাজে লাগিয়ে মস্কো তার সামরিক যন্ত্র চালু রাখতে সক্ষম হয়েছে। তবে এ জন্য রাশিয়ার যোদ্ধারা ও তাদের পরিবারগুলো কী হারিয়েছে তার হিসাব পুতিন কখনো মেলাতে পারবেন না। যুদ্ধ এক সময় থামবে। কিন্তু ইতিমধ্যে দুই দেশের প্রায় সোয়া এক লাখ সেনা সদস্য, ১৮ হাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণ আর বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনের অনিশ্চয়তার দাম কখনো পরিশোধ হবে না। বছর ঘুরে আবার শীতকাল আসবে।

শেষরাতের শুভ্র তুষারে ঝাপসা হবে পশ্চিমে হেলে পড়া চাঁদ। তীব্র শীতে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাকও থেমে যাবে। হঠাৎ হয়তো ইউক্রেন বা রাশিয়ার কোনো শহরতলির শীতল নীরবতা খান খান হবে তুমুল বিস্ফোরণে। আর্তনাদ চাপা পড়বে প্রতিধ্বনিতে। মৃতদের তালিকায় যোগ হবে আরও নাম। শুধু যুদ্ধের হালখাতায় বকেয়া থাকবে শান্তি।

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment