ট্রাম্পের ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছে
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে টুইটার থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। টুইটার বলছে, ‘ভবিষ্যতে সহিংসতা উসকে দেওয়ার ঝুঁকি’ থাকার কারণে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
গেল ৬ জানুয়ারি নতুন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয় অনুমোদনের দিনে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হামলা চালায় ট্রাম্প সমর্থকরা। সেই বিক্ষুব্ধদের উদ্দেশে ট্রাম্প টুইটে লিখেছিলেন ‘আমি তোমাদের ভালোবাসি’। তাদের ‘দেশপ্রেমিক’ বলেও উল্লেখ করেছিলেন ট্রাম্প।
টুইটারের মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, ঘটনার পর শুক্রবার ১২ ঘণ্টার জন্য ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হয়েছিল। আবারও নীতিমালা ভাঙলে তার অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে সতর্কও করা হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবার ট্রাম্পকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্টে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বেশ চাপে আছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বুধবার পার্লামেন্টে ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবের ঘটনা ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে নজিরবিহীন একটি ঘটনা। সহিংসতায় চারজনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। ওই হামলার ঘটনায় সারা বিশ্বের কাছেই যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষূণ্ণ হয়েছে।
পার্লামেন্টে সহিংসতার ঘটনার পর থেকেই ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করার জোরালো দাবী জানায় বিভিন্ন মহল। তিনি তার সমর্থকদের থামানোর বদলে তাদের উসকে দিয়েছেন বলেই তারা এমন তাণ্ডব চালানোর সাহস পেয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে ঘটনার সার্বিকতায় বিদায়বেলায় ট্রাম্পকে বেশ একা মনে হচ্ছে। মিত্র হিসেবে পরিচিতদের আর ট্রাম্পের ধারেকাছে দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করা উচিত। যদি ট্রাম্প সেটা না করেন তবে কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ থেকে তার অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনায় ট্রাম্পের দায় থাকার পরও তিনি এখনও বহাল তবিয়তে ক্ষমতায় আছেন। পেলোসির মতে, এই সহিংসতার দায় নিয়ে ট্রাম্পের এখনই পদত্যাগ করা উচিত।
আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেনের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন ট্রাম্প। তার আগ পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি। ক্ষমতা হস্তান্তরে তার হাতে দুই সপ্তাহেরও কম সময় বাকি আছে। কিন্তু ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এখনই তার ওপর পদত্যাগের চাপ বাড়ছে।
ন্যান্সি পেলোসি এবং ডেমোক্র্যাট দলের অন্য সদস্যদের বিশ্বাস ট্রাম্পকে এখনই ক্ষমতাচ্যুত করা উচিত। এক বিবৃতিতে পেলোসি বলেন, ‘এটা ডেমোক্র্যাট সদস্যদের আশা যে, প্রেসিডেন্ট তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগ করবেন। কিন্তু তিনি যদি তা না করেন তবে আমি নীতিনির্ধারক কমিটিকে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী অনুযায়ী ট্রাম্পকে অভিশংসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেব।’
অর্থাৎ ট্রাম্পের হাতে এখন দুটি পথ খোলা। এক স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করা অথবা অভিশংসিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া। কোনটা গ্রহণ করবেন সেটা তার সিদ্ধান্ত। ন্যান্সি পেলোসি বলছেন, ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সব বিকল্পই হোয়াইট হাউজের হাতে আছে।
ট্রাম্পের অভিশংসন অথবা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী যেটাই অনুসরণ করা হোক না কেন উভয় ক্ষেত্রেই ট্রাম্প ক্ষমতাচ্যুত হলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। অর্থাৎ ট্রাম্প ক্ষমতা হারালে আগামী ২০ জানুয়ারি জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের আগ পর্যন্ত পেন্সের হাতেই ক্ষমতা থাকবে।
কিন্তু বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা ছাড়ার আর অল্প কিছুদিনই বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে অভিশংসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা একটু জটিল হলেও তা অসম্ভব নয়। অপরদিকে সংবিধানের ২৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে ট্রাম্পকে ক্ষমতাচ্যুত করা বেশী সহজ।❐