Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
April 28, 2024
Homeবাংলাদেশমিথ্যা অভিযোগে দীর্ঘ টানা ২০ বছর কারাগারে ফাঁসির কনডেম সে

মিথ্যা অভিযোগে দীর্ঘ টানা ২০ বছর কারাগারে ফাঁসির কনডেম সে

মিথ্যা অভিযোগে দীর্ঘ টানা ২০ বছর কারাগারে ফাঁসির কনডেম সে

স্ত্রী ও শিশু সন্তান হত্যার মিথ্যা অভিযোগে দীর্ঘ টানা ২০টি বছর শেখ জাহিদের কেটেছে কারাগারে ফাঁসির কনডেম সেলে। খুলনার সেই আলোচিত শেখ জাহিদ (৫০) অবশেষে কারাগার থেকে মুক্ত পৃথিবীর আলোর দেখা পেলেন সোমবার।

সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ২৫ মিনিটে শেখ জাহিদ খুলনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ সময় তার স্বজনরা তাকে পেয়ে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন।

তবে বিনা দোষে জীবনের মূল্যবান ২০টি বছর নষ্ট হয়ে গেলেও শেখ জাহিদ এ জন্য কাউকে দায়ী করছেন না বা কারো শাস্তি চান না। বাকি জীবন আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করেই পার করতে চান।

এর আগে সোমবার দুপুরে শেখ জাহিদের মুক্তির নির্দেশনা বাগেরহাট আদালত থেকে খুলনা জেলা কারাগারে এসে পৌঁছালে তার মুক্তির কার্যক্রম শুরু হয়। আদালতের নির্দেশনা হাতে পাওয়ার পরই সন্ধ্যায় শেখ জাহিদকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন খুলনা জেলা কারাগারের সুপার মো. ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, ‘স্ত্রী ও দেড় বছরের শিশু কন্যা হত্যাকাণ্ডের দায়ে ২০০০ সালের ২৫ জুন মৃত্যুদণ্ড হয় যুবক জাহিদ শেখের। তারপর থেকেই তিনি কারাগারের কনডেম সেলে টানা ২০ বছর ধরে মৃত্যুর প্রহর গুণছিলেন।

কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সেই আসামি শেখ জাহিদকে ২৫ আগস্ট খালাসের রায় দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। সুপ্রিম কোর্ট থেকে দণ্ড ঘোষিত বাগেরহাট আদালতে তার খালাসের নির্দেশ পাঠানো হয়। সেখান থেকে ওই নির্দেশনা সোমবার খুলনা কারাগারে এসে পৌঁছানোর পরই তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।’

এদিকে দীর্ঘ ২০ বছর পর শেখ জাহিদের মুক্তির খবরে তার স্বজনরা আগে থেকেই জেলা কারাগারের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার চাচা শেখ আশরাফুজ্জামান, ভগ্নিপতি আজিজুর রহমান ও আব্দুস সালাম এবং তার ছোট বোন।

মুক্তির পর শেখ জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, ফাঁসির কনডেম সেলে ‘প্রতি মুহূর্তেই তিনি মৃত্যু কামনা করতেন। কখনই ভাবতেই পারেন নি, কোনও দিন মুক্তি পাবেন। তার মুক্তির জন্য তিনি মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন এবং কারা কর্তৃপক্ষসহ যারা তার মুক্তির জন্য সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মুক্তির পর তাকে খুলনা মহানগরীর মিয়াপাড়া এলাকায় তার বোনের বাসায় নেওয়া হয়।

কারা ফটকে জাহিদের ভগ্নিপতি আজিজুর রহমান জানান, প্রথমে জাহিদের নামে নারী নির্যাতন আইনে ফকিরহাট থানায় মামলা দায়ের হলে মামলার তৎকালীন তদন্তকারী কর্মকর্তা জাহিদের পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ দাবি করেন। সেই টাকা দিতে না পারায় জাহিদকে উক্ত মামলায় একতরফা দোষী সাব্যস্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয় বলে তিনি দাবি করেন।

২০টি বছর নষ্ট হওয়ায় জাহিদের বাকি জীবন যাতে কিছু করে খেতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৪ সালে বাগেরহাটের ফকিরহাট থানার উত্তর পাড়ার ময়েন উদ্দিনের মেয়ে রহিমার সঙ্গে খুলনার রূপসা উপজেলার নারিকেলি চাঁদপুরের ইলিয়াছ শেখের ছেলে শেখ জাহিদের বিয়ে হয়। জাহিদ শ্বশুর বাড়িতে ঘরজামাই থাকতেন। পরে তাদের সংসারে কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। তার নাম রাখা হয় রেশমা খাতুন।

১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি হত্যাকাণ্ডের তিন মাস আগে রহিমার বাবার বাড়ি থেকে ৫০০ গজ দূরে একটি পাকা ঘরে বসবাস শুরু করে ওই দম্পতি। ১৬ জানুয়ারি বিকালে রহিমার মা আনজিরা বেগম মেয়ের বাড়ির দরজা ভেজানো অবস্থায় দেখতে পান। বাইরে থেকে ডাকাডাকি করে সাড়া না পেয়ে ভেতরে ঢুকে খাটের ওপর কাঁথা ও লেপের নিচে বাচ্চাসহ রহিমার লাশ পান তিনি।

ওই ঘটনায় রহিমার বাবা ময়েন উদ্দিন বাদি হয়ে পরদিন ফকিরহাট থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ১৯৯৮ সালের ১৯ নভেম্বর এ মামলার অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তার আগেই ওই বছরের ১৮ জানুয়ারি আদালতে আত্মসমর্পণ করেন জাহিদ।

হত্যাকাণ্ডের তিন বছরের মাথায় ২০০০ সালের ২৫ জুন বাগেরহাটের জেলা ও দায়রা জজ আদালত আসামি শেখ জাহিদকে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর জেল আপিল করেন তিনি।

সে হিসাবে আসামি জাহিদ ২০ বছর ধরে কনডেম সেলে ছিলেন। ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদনের আবেদন) ও জেল আপিলের শুনানি শেষে ২০০৪ সালের ৩১ জুলাই ফাঁসির রায় বহাল রাখে হাইকোর্ট।

ওই বছর ২৯ ডিসেম্বর হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে জেল আপিল করেন আসামি জাহিদ। গত সপ্তাহে সে আপিলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার রায় দিল দেশের সর্বোচ্চ আদালত।

এদিকে দীর্ঘ ২০ বছর পর বেকসুর খালাস পাওয়া নির্দোষ জাহিদের চাচা আকরাম হোসেন শেখ আক্ষেপ করে রাইহিংবিডিকে বলেন, ‘জাহিদের ২০ বছরের জীবন ফেরত দিবে কে? কে দেবে তার জবাব? মাতৃহীন, পিতৃহীন ও সম্বলহীন জাহিদের দায়িত্ব নেবে কে?

তিনি জানান, জাহিদ জেলে থাকা অবস্থায় তার বাবা ইলিয়াজ শেখ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে এবং মাতা হামিদা বেগম বিভিন্ন রোগে-শোকে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে যারা জাহিদের জীবন নষ্ট করে দিয়েছে, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।❐

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment