শেয়ারবাজারের আরও ৫০ কোটি টাকা আত্মসাৎ
শেয়ারবাজার থেকে আরও ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি ইউনিভার্সাল ফিন্যান্সিয়াল সলিউশন (ইউএফএস)। এ টাকার মালিক বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড। দুটি ফান্ডে বিনিয়োগের জন্য তারা এ টাকা ইউএফএসকে দিয়েছিল। ফান্ড দুটির ট্রাস্টি (গ্যারান্টি দেওয়া প্রতিষ্ঠান) হিসাবে রয়েছে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। এছাড়া চারটি মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ১৫৮ কোটি টাকা নিয়ে ইউএফএস-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ হামজা আলমগীর দুবাই পালিয়ে গেছেন। এ পর্যন্ত তার আত্মসাৎ করা টাকার পরিমাণ সব মিলিয়ে ২০৮ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
দেশের বাইরে থাকায় হামজা আলমগীরের মন্তব্য পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ন্যাশনাল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহমুদ হোসেন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে বিস্তারিত জানা যাবে। এরপর আমরা আইনগত পদক্ষেপ নেব।
মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে হামজা আলমগীরের দুবাই পালিয়ে যাওয়া নিয়ে ১ জানুয়ারি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুগান্তর। এরপরই নড়েচড়ে বসেন দেশের নীতিনির্ধারকরা। এ ব্যাপারে হাইকোর্ট রুল জারি করেন। বর্তমানে বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিএসইসিকে চিঠি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এছাড়া আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকারি বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।
জানা যায়, গত বছরের জানুয়ারিতে শেয়ারবাজারে ন্যাশনাল ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের অনুমতি দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ইউএফএসইপিএল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ফান্ডে ১০০ কোটি টাকা এবং ইউএফএসইপিএল প্রাইভেট ইক্যুইটি ফান্ডে ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে দুই প্রতিষ্ঠানে ৫০ কোটি টাকা দেয় ন্যাশনাল ব্যাংক। এ টাকা এনআরবিসি ব্যাংক সিকিউরিটিজের মাধ্যমে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে ইউএফএস। এক্ষেত্রে ইউএফএসইপিএল প্রাইভেট ইক্যুইটির ক্লায়েন্ট কোড এ৫৪০ এবং ইউএফএসইপিএল ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ক্লায়েন্ট কোড এ৫৪১। ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের এক মাসের মধ্যে দুই পোর্টফোলিও থেকে ৪৯ কোটি ৮৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রাইভেট ইক্যুইটির ফান্ড থেকে ২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং ভেঞ্চার ক্যাপিটাল থেকে ২৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়। বর্তমানে দুই পোর্টফোলিওতে ১০ লাখ ৯ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা রয়েছে। এরপর ন্যাশনাল ব্যাংক থেকে বিনিয়োগের ব্যাপারে তথ্য চাওয়া হলে কালক্ষেপণ করতে থাকে ইউএফএস। সর্বশেষ তাদের বিনিয়োগ ও ব্যাংক হিসাবের ভুয়া তথ্য দেওয়া হয়। জানতে চাইলে সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিমাই কুমার সাহা রোববার যুগান্তরকে বলেন, এ তহবিল নিয়ে যাওয়ার পরপরই আমরা বিএসইসিকে জানিয়েছি।
জানা যায়, ইউএফএস-এর পরিচালনায় পাঁচটি মিউচুয়াল ফান্ডে টাকার পরিমাণ ৪৪০ কোটি। এর মধ্যে চারটি মিউচুয়াল ফান্ডের ১৫৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে ইউএফএস এসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। এ টাকা নিয়ে ১৩ অক্টোবর দুবাই পাড়ি জমিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ হামজা আলমগীর। কিন্তু রহস্যজনক কারণে চার বছর নিষ্ক্রিয় ছিল ফান্ডের ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান (গ্যারান্টি দেওয়া প্রতিষ্ঠান) আইসিবি। অডিট কোম্পানিও ভুয়া রিপোর্টকে বৈধতা দিয়েছে। বিএসইসির প্রাথমিক তদন্তে এ তথ্য উঠে আসে। ইতোমধ্যে কোম্পানিটির সঙ্গে কোনো ধরনের আর্থিক লেনদেন না করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। এসব বিষয় নিয়ে ১ জানুয়ারি যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশিত হলে জড়িত ১৫ জনের ব্যাংক হিসাব স্থগিত করে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইউনিট (বিএফআইইউ)। এর মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সাল ফিন্যান্সিয়াল সলিউশন, সৈয়দ হামজা আলমগীর, ইশরাত আলমগীর, সৈয়দা শেহরীন হুসাইন, সৈয়দ আলমগীর ফারুক চৌধুরী, মাহিদ হক, তারেক মাসুদ খান, আলিয়া হক আলমগীর, মোহাম্মদ জাকির হোসেন, সৈয়দা মেহরীন রহমান, মোহাম্মদ উম্মে সালমা সোহানা, ইউএফএস পপুলার লাইফ ইউনিট ফান্ড, ইউএফএস ব্যাংক এশিয়া ইউনিট ফান্ড এবং ইউএফএস পদ্মা লাইফ ইসলামিক ফান্ড।
আবার নতুন করে ৫০ কোটি টাকা আত্মসাতের তথ্য মিলেছে। ফলে এখন পর্যন্ত আত্মসাৎ করা তহবিলের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০৮ কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সংখ্যা আরও বেশি। তদন্ত শেষ হলে তা জানা যাবে।