Our Concern
Ruposhi Bangla
Hindusthan Surkhiyan
Radio Bangla FM
Third Eye Production
Anuswar Publication
Ruposhi Bangla Entertainment Limited
Shah Foundation
Street Children Foundation
October 13, 2024
হেডলাইন
Homeপ্রধান সংবাদক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক নারী মুক্তিযোদ্ধা

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক নারী মুক্তিযোদ্ধা

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর এক নারী মুক্তিযোদ্ধা

বর্তমান নেত্রকোনা জেলার কলমাকান্দা উপজেলাধীন রামপুর গ্রামের মেয়ে তুষি হাগিদক ১৯৭১ সালে জীবন বাজি রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ১১ নম্বর সেক্টরের ময়মনসিংহ অঞ্চলে ভারতীয় সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন চৌহান ও ক্যাপ্টেন পিয়ারী লালের তত্ত্বাবধানে নার্স ও গোয়েন্দার দায়িত্ব পালন করেন তিনি।

আহত মুক্তিযোদ্ধাদের অকাতরে সেবাশুশ্রূষা করেন। অনেক বীর যোদ্ধার পবিত্র রক্ত তার হাতে লেগেছিল। বুলেটবিদ্ধ শরীরের রক্ত ধুয়ে পরিষ্কার করেছেন।

এপ্রিলের কোনও একদিন পাকসেনারা গ্রামের এক ছেলের কাছে ‘লাড়কি হ্যায় না, লাড়কি?’ বলে মেয়ে জোগাড় করে দেওয়ার কথা বলে। ছেলেটি হানাদারদের ভাষা না বুঝে গ্রামে গিয়ে লোকদের কাছে শব্দগুলো বললে লোকজন বুঝে নেয় ওরা কী বলতে চায়। সে রাতেই তুষিসহ গ্রামের সব মেয়ে সীমান্ত পার হয়ে ভারতের মেঘালয়ের রংরা এলাকায় আশ্রয় নেয়।

সেখানে পরিবারের অন্যদের সঙ্গে থাকার সময় পাকিস্তানিদের সেই কথাগুলো তুষির মনের ভেতর ক্ষোভের আগুন হয়ে জ্বলতে থাকে।

এরই মধ্যে একদিন মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক বালুচড়া হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক গাব্রিয়েল রাংসা মহিলা মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প গঠনের খবর দিয়ে বলেন, তোমরা যদি দেশের জন্য কিছু করতে চাও তাহলে আমার কাছে নাম দিতে পার।

প্রস্তাব শুনে মল্লিকা ঘাগ্রা নামে এক বান্ধবীর সঙ্গে তুষি ভারতীয় সেনা ক্যাপ্টেন চৌহানের তত্ত্বাবধানে মেয়েদের ক্যাম্পে যোগদান করেন। এভাবে একই দিনে ১৮ জন মেয়ে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম লেখান।

রিক্রুটিংয়ের পরপরই শুরু হয় প্রশিক্ষণ। এক মাসেরও বেশি সময় রংরার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় প্রশিক্ষণের পর তাদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়। তুষি বলেন, আমার ইচ্ছা ছিল সরাসরি যুদ্ধ করার। কিন্তু সে সুযোগ আমি পাই নি। তবে বুঝেছিলাম আমাদের কাজও কম গুরুত্বের নয়। সীমান্ত এলাকায় আমাদের অতন্দ্র প্রহরীর মতো থাকতে হতো।

সন্দেহভাজন কাউকে দেখলেই তাকে অনুসরণ করতে হতো আর কর্তৃপক্ষকে জানাতে হতো। অনেক আহত মুক্তিযোদ্ধাকে আমাদের ক্যাম্পে নিয়ে আসা হতো। তারা যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কাছে থাকত, আমরা প্রাণপণে সেবাশুশ্রূষা দেয়ার চেষ্টা করতাম।

আমার মনে আছে, ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর বাংলাদেশের মানচিত্রখচিত বঙ্গবন্ধুর ছবিসংবলিত ক্যাপ্টেন চৌহানের সই করা একটি সার্টিফিকেট আমাদের প্রত্যেকের হাতে দিয়ে তিনি বলেছিলেন, কয়েকদিনের মধ্যেই দেশ স্বাধীন হবে।

এ সার্টিফিকেট তোমাদের হাতে রাখ, একদিন কাজে লাগবে। সত্যিই চারদিন পর দেশ স্বাধীন হল। বুকভরা আশা নিয়ে স্বাধীন দেশে নিজ গ্রামের বাড়িতে ফিরে এলাম। শুরু করলাম ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাড়িঘর নতুন করে গড়ে তোলার কাজ। স্কুলে যাওয়া শুরু করলাম। ১৯৭৩ সালে মাধ্যমিক পাস করলাম।

আর্থিক সংকটের কারণে পড়াশোনা ছেড়ে মিশনারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি নিলাম। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পরিণতিতে দেশে অরাজকতা শুরু হল।

গ্রামে ছড়িয়ে পড়ল, যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল তাদের নাকি মেরে ফেলা হবে, নয়ত জেলে যেতে হবে। ভয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের সেই সনদপত্র পুড়িয়ে ফেলি।

মুক্তিযোদ্ধা তালিকা সংশোধনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে তুষি হাগিদক বা তার সঙ্গীরা কিছু জানতেন না। লোকমুখে শুনে তুষিসহ ছয়জন ২০১৪ সালে আবেদন করেন। কিন্তু তাদের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয় নি। তুষি হাগিদক মিশনারি স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি বাংলাদেশ বেতারে গারোদের জন্য প্রোগ্রাম সালগিত্তালের নিয়মিত একজন সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন।

দীর্ঘ ৪৪ বছর শিক্ষকতা করার পর চলতি বছর অবসর নিয়েছেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জননী এই নিভৃতচারী নারী মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামে স্বামী-সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন।

সরকার ও জনগণের কাছে তুষি হাগিদকের একটিই চাওয়া- মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু যেন দেওয়া হয়। অসহায়-অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের জন্য পড়াশোনা ও চাকরির সুযোগ যেন থাকে।

বাঁধন আরেং: লেখক ও গবেষক

Share With:
Rate This Article
No Comments

Leave A Comment