এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে পানি লাগে ৬৬১ লিটার
এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ৩-৫ হাজার লিটার লাগে এমন তথ্য প্রচলিত থাকলেও নতুন গবেষণা থেকে জানা গেল, তা ঠিক নয়। বরং এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে পানি লাগে ৬৬১ লিটার।
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সেচের জন্য ব্যবহারযোগ্য পানি; বিশেষত ভূগর্ভস্থ পানির টেকসই স্তর নির্ধারণ এবং পানির ব্যবহারের পরিবর্তনের উপর নারী ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার প্রভাবের মূল্যায়নের জন্য করা গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টার সম্মেলন কক্ষে এক কর্মশালায় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ‘খাদ্য নিরাপত্তায় ভূগর্ভস্থ পানির টেকসই ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক গবেষণার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন সিএসআইআরও বিশেষজ্ঞ ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন।
গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০১৫-১৬ সালে এক কেজি বোরো ধান উৎপাদনে ৬৬১ লিটার পানি লেগেছে আর ২০১৬-১৭ সালে লেগেছে ৫৮৪ লিটার।
আরও দেখা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির প্রাপ্যতা বোরো ধান উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে। বেশি দূষ্পাপ্র্য এলাকায় তুলনামূলকভাবে সেচ খরচ বেশি হয়, অন্যদিকে উৎপাদন কম হয় এবং কৃষকের লাভ কম হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে বোরো চাষ করার ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সব স্থানে নিচে নেমে যায়নি। শুধু নওগাঁ, নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী- এই তিনটি জেলায় পানির স্তর নিচে নেমেছে। এ ছাড়া মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারই পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার একমাত্র কারণ নয়। উজানে নদীর নিয়ন্ত্রণ, শস্য বিন্যাসের পরিবর্তন, জলাভূমি হ্রাস পাওয়া, শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তনসহ নানা কারণে পানির স্তর নিচে নামছে।
গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গত এক দশকে বোরো ধানের সম্প্রসারণ কমে এসেছে বা কোথাও সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে গেছে। বোরো ধানের স্থানে এসেছে আউশ ধান।
আরও বলা হয়, আবহাওয়ার পরিবর্তন পানির ভারসাম্য ও ভূগর্ভস্থ পানির সহজলভ্যতার উপর প্রভাব ফেলেছে। তবে দেখা গিয়েছে সেচের পানি ভূগর্ভস্থ পানির মাত্রায় উন্নতি আনতে সাহায্য করেছে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়া হাই কমিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার নাদরিয়া সিম্পসন। সভাপতিত্ব করেন আইডব্লিউএমের নির্বাহী পরিচালক আবু সালেহ খান।
অস্ট্রেলিয়া সরকারের আর্থিক সহযোগিতায় অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক সিএসআইআরও এর সঙ্গে যৌথভাবে গবেষণাটি সম্পন্ন করেছে ইন্সটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বারিন্দ মাল্টিপারপাস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি এবং ওয়াটার রিসোর্সেস প্ল্যানিং অর্গানাইজেশন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ অর্গানাইজেশনের সহযোগিতায় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং এ কর্মশালার আয়োজন করে।